আমার যখন সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু সার্চ করি তখন সার্চের ফলাফল হিসেবে অনেকগুলো ওয়েবসাইট দেখতে পায়। আমরা সাধারণত সার্চ ইঞ্জিনে প্রথম পেজের পর আর স্ক্রল করতে চায় না। আচ্ছা কখনো ভেবেছেন কি, এই হাজার হাজার ফলাফলের মাঝে প্রথম পেজের এই ১০ টি সাইট সবার প্রথম কিভাবে আসল? পারতেছেন না বলতে, আমি বলে দিচ্ছে এর মূল কারন হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। এই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের প্রধান টার্গেটই থাকে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজে নিয়ে আসা। যাতে করে তা অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছানো যায়।
Table of Contents
সার্চ ইঞ্জিন কি?
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে জানতে হবে। সার্চ ইঞ্জিন হলো এমন এক ধরনের টুলস বা সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যার সাহায্যে ইন্টারনেটের অজস্র ওয়েব সার্ভার থেকে সহজেই যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করা যায়। এটি এমন একটি টুলস যা সমস্ত ইন্টারনেট বিস্তৃত ওয়েবসাইট গুলোকে আয়ত্তের মধ্যে রাখে।
সহজ কথায় বলা যায়, যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে কোনো তথ্য, ইমেজ, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি খোঁজা হয় সেই ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন বলা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন হলো গুগল। এর বাইরে আরও কিছু জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। যেমন Bing, Baidu, Ask.com, Yahoo, DuckDUckGO, AOL, Yandex, Excite, Wolfram Alpha। বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন হলো ‘পিপিলিকা’। এটি ২০১৩ সালে চালু হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সার্চ ইঞ্জিন ‘চরকি’। তবে এদের কার্যক্রম কিছু বছর পর বন্ধ হয়ে যায়।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কি?
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন হচ্ছে এমন একটি কৌশল যা প্রয়োগ করে একটি ওয়েবসাইট কে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজের প্রথম সারিতে আনা হয়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ওয়েবসাইটকে সকলের কাছে সহজে পৌছে দেওয়া, এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা এবং সাইটের ভিজিটর বা ট্রাফিক বৃদ্ধি করা।
সাধারণত, SEO যে কাজটি করে তা হলো ইউজার যে বিষয় নিয়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে সার্চ করে সে যেন তার সার্চ ইনটেন্ট বা চাহিদানুযায়ী কনটেন্ট পায় তা নিশ্চিত করা। অর্থ্যাৎ, SEO হচ্ছে একধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং যা একটি ওয়েবসাইটের গুনগতমান উন্নত করার পাশাপাশি ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি করে থাকে।
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন কেন করা হয়?
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার জন্য সবকিছুই এখন অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজনীতি সকল বিষয়েই এখন অনলাইনে করা হচ্ছে। অফলাইন ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য তুলনায় অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়ায় বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে এখানে একটি প্রতিযোগিতা মূলক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, সার্চ ইঞ্জিন গুলোর প্রথম পাতায় শুধুমাত্র দশটি ওয়েব পেজের জায়গা থাকে। যারা এই দশটি স্থানের মধ্যে জায়গা নিতে পারবে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচার এবং প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। সার্চ ইঞ্জিন গুলোর এই প্রথম পাতায় জায়গা পাওয়া খুব সহজ বিষয় না। তার জন্য অনেক পরিশ্রম এবং কলাকৌশল প্রয়োগ করতে হয়। এসব বলা কৌশলের মধ্যে প্রধান যে কৌশল তা হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা তাদের কাস্টমারদের কাছে খুব সহজেই পৌঁছে দিতে পারে। তাছাড়া একটি নতুন ওয়েবসাইটকে ব্যবহারযোগ্য করে তা অডিয়েন্সদের কাছে পৌঁছে দিতে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে তার মাঝে অন্যতম হচ্ছেঃ
- ওয়েবসাইটের ভিজিবিলিটি বা দৃশ্যমান বাড়ানোর জন্য।
- ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বা অডিয়েন্সের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য।
- পণ্যের বিক্রয় বা সেবা প্রচার করার জন্য।
- ওয়েবসাইটের সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিং উন্নত করার জন্য।
- ওয়েবসাইটের মানসম্পন্ন কনটেন্ট প্রদান করার জন্য।
- ওয়েবসাইটের স্পীড বৃদ্ধি করার জন্য।
- ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা ভালো করার জন্য।
- ওয়েবসাইটের ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি করার জন্য।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার জন্য।
এসইও কত প্রকার ও কি কি?
ব্যবহারগত দিক এবং কার্যপ্রণালীর উপর ভিত্তি করে এসইও কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে মৌলিক দিক থেকে এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন,
- অন-পেজ এবং
- অফ-পেজ
- টেকনিক্যাল এসইও
- লোকাল এসইও
এই পর্যায়ে এসইও এই চারটি ভাগকে আমরা ছোট করে আলোচনা করব। এগুলো কিভাবে কাজ করে এই সম্পর্কেও তুলে ধরা হবে।
১। অন পেজ এসইও
অন পেজ এসইওতে সাধারণত একটি ওয়েবসাইটের ভেতরের কাজগুলো করা হয়। একজন ভিজিটর ওয়েবসাইট এসে কন্টেন্ট গুলোকে যেন সুন্দরভাবে এবং সহজে দেখতে পারে এজন্য অন পেজ এসইও করা হয়। অন পেজ এসইও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারণ আপনার ওয়েবসাইট যদি এসইও ফ্রেন্ডলি না হয় তাহলে আপনি ভিজিটর পাবেন না। অন পেজ এসইও তে যে কাজগুলো প্রধানত করা হয় তা হচ্ছে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা, টাইটেল ট্যাগ এবং মেটা ডেসক্রিপশন অপটিমাইজ করা, হেডিং এবং সাব হেডিংগুলো ব্যবহার করা, ইমেজকে এসইও করা, সঠিকভাবে লিংকিং করা ইত্যাদি।
২। অফ পেজ এসইও
অফ পেজ এসইওতে সাধারণত ওয়েবসাইটের বাইরের কাজ গুলো করা হয়। সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের র্যাংকিং এ এগিয়ে থাকার জন্য অফ পেজ এসইও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অফ পেজ এসইওতে অনেক কাজ করা হয়। যেমন, হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিঙ্ক তৈরি করা, সোশ্যাল মিডিয়াতে কনটেন্ট শেয়ার করা, গেস্ট পোস্টিং করা, নিউজ ওয়েবসাইটে প্রেস রিলিজ করা, বিভিন্ন সাইটে ইমেজ শেয়ার করা, ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে সার্ভিস প্রমোশন করা, ডিরেক্টরি ওয়েবসাইট ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য যুক্ত করা, বিভিন্ন ধরনের ফোরামে যুক্ত হয়ে ওয়েবসাইট প্রাসঙ্গিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া ইত্যাদি।
৩। টেকনিক্যাল এসইও
অনেকের কাছে টেকনিক্যাল এসইও বিষয়টি নতুন মনে হতে পারে। বর্তমান সময়ে অর্গানিকভাবে ওয়েবসাইটের রেংকিং এ ভালো পজিশন ধরে রাখার জন্য টেকনিক্যাল এসইও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ পদ্ধতিতে ওয়েবসাইটের অভ্যন্তরিন টেকনিক্যাল বিষয়গুলোকে ভালোভাবে অপটিমাইজ করা হয়। অর্থাৎ এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম, XML সাইট ম্যাপ, ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার, ওয়েবসাইট স্পীড, এবং সার্ভার লোডিং টাইমকে ভালোভাবে অপটিমাইজ করা হয়। ফলে সার্চ ইঞ্জিন গুলো খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইটকে ইনডেক্স করতে পারে এবং র্যাংকিং এ এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
৪। লোকাল এসইও
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে লোকাল এসইও। এ পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা দেশ টার্গেট করে ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রধান এবং মূল লক্ষ্য থাকে লোকাল বা স্থানীয় মানুষদের টার্গেট করে কনটেন্ট পাবলিশ করা। এ পদ্ধতিতে Google My Business profile এ ব্যবসার সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে একাউন্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ডাইরেক্টরি সাবমিশন সহ সকল প্রকার কাজ লোকাল এসইওতে করা হয়। ব্যবসায় প্রচার প্রসার এবং পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধিতে লোকাল এসেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন কিভাবে শিখব?
এসইও যেহেতু সার্চ ইঞ্জিন এবং ওয়েবসাইট সংক্রান্ত বিষয়, এ জন্য এসইও এর কাজগুলো শুরু করতে একটি ওয়েবসাইটের দরকার হবে। কারণ আপনি যখন কাজ শিখবেন তখন সেটি প্র্যাকটিস করার জন্য একটি লাইভ ওয়েবসাইট দরকার হবে। আপনি চাইলে খুব কম খরচেই নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলতে পারেন। আপনি যদি নিজে ওয়েবসাইট তৈরি করতে না পারেন তাহলে কোনো একজন ওয়েব ডেভেলপার কে হায়ার করতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথমে ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে। এজন্য আপনার প্রতিবছর ডোমেইন-হোষ্টিং বাবদ ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা খরচ হবে। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট যদি নিজে করেন তাহলে খরচটা বেঁচে যাবে আর তা না হলে ওয়েব ডেভলপার এর জন্য আলাদা বাজেট রাখতে হবে।
এবার আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত কনটেন্ট দিতে থাকুন এবং ভিজিটর আনার জন্য এসইও এর কাজগুলো করুন। যখন আপনি নিয়মিতভাবে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর পেতে থাকবেন তখন বুঝবেন যে আপনার এসইও কাজ করছে। সাইটের প্রগ্রেস ট্র্যাক করার জন্য গুগল সার্চ কনসোল এবং গুগল ট্যাগ ম্যানেজার টুলটি ব্যবহার করতে হবে।
নিজে নিজে এসইও শেখার সহজ রোডম্যাপ
নতুনদের কথা মাথায় রেখে আমরা ৯ সপ্তাহে এসইও শেখার সহজ একটি রোড ম্যাপ তৈরি করেছি। যেখানে এসইওর বেসিক থেকে এডভান্স বিষয়গুলো সুন্দর করে সপ্তাহ ভিত্তিক গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। এই টেবিল ফলো করে আপনি SEO এর বিষয়বস্তুগুলো শেখা শুরু করতে পারেন।
সপ্তাহ | টাস্ক/বিষয় |
---|---|
সপ্তাহ ১ | – Google Search Console এ ওয়েবসাইট সাবমিট – Bing Webmaster Tools এ ওয়েবসাইট সাবমিট – গুগল ট্যাগ ম্যানেজার এর ব্যবহার – ওয়েব সাইটের সাইটম্যাপ তৈরি |
সপ্তাহ ২ | – গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার থেকে কিওয়ার্ড রিসার্চ – কম্পিটিটরদের কিওয়ার্ড এনালাইসিস – এসইও ফ্রেন্ডলি ব্লগপোস্ট তৈরি – ব্লগ পোস্টের URL এ কিওয়ার্ড ব্যবহার |
সপ্তাহ ৩ | – কনটেন্ট এর কিওয়ার্ডে H1-H6 ট্যাগের ব্যবহার – ইমেজ অপ্টিমাইজেশন – Imaged Alt text এর ব্যবহার – External Links এর ব্যবহার |
সপ্তাহ ৪ | – Internal Links এর ব্যবহার – Crawl Errors ফিক্সিং এর কাজ – Broken Links ফিক্সিং এর কাজ |
সপ্তাহ ৫ | – Mobile-Friendly ডিজাইন এর কাজ – Duplicate কন্টেন্ট ফিক্সিং এর কাজ – ওয়েবসাইট এর স্পীড বৃদ্ধি |
সপ্তাহ ৬ | – Schema Markup এর ব্যবহার – ব্যাকলিংক তৈরি – Guest ব্লগিং |
সপ্তাহ ৭ | – কম্পিটিটরদের ব্যাকলিংক যাচাই – ফোরাম পোস্টিং – ব্লগ কমেন্টিং |
সপ্তাহ ৮ | – গুগল মাই বিজনেস লিস্টিং – এসইও রিপোর্ট তৈরি – ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর অন-পেজ এসইও |
সপ্তাহ ৯ | – Yoast প্লাগিন এর ব্যবহার – Ranktracker প্লাগিন এর ব্যবহার – Ongoing SEO activities and improvements |
শেষ কথাঃ
উপরের টপিকগুলো ধরে ধরে যদি কাজ শিখেন, তাহলে এর যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে হলেও মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন। আপনি যদি মার্কেটপ্লেসে জব গুলোর দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখতে পাবেন এ ধরনের ছোট ছোট অনেক জব রয়েছে। এভাবে ছোট ছোট কাজগুলো করার পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যান্য কাজগুলোও শিখতে থাকুন। এজন্য এ সংক্রান্ত বই পড়ুন, টিউটোরিয়াল দেখুন এবং বেশি বেশি প্র্যাকটিস করুন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.