বর্তমান টেক দুনিয়ায় ঝড় তোলা Chat GPT চ্যাট জিপিটির নাম শুনেনি, এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের এক মিলিয়ন ইউজারের মাইলফলক ছুঁতে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। সেখানে মাত্র পাঁচ দিনে Chat GPT চ্যাট জিপিটি এক মিলিয়ন ইউজারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে।
Table of Contents
চ্যাট জিপিটি কি? Chat GPT এর পূর্ণরূপ
চ্যাট জিপিটি Chat GPT এর নামের মাঝেই এর কাজের অর্থ লুকানো রয়েছে। Chat শব্দের অর্থ হচ্ছে কথোপকথন বা conversation, G তে Generative, P তে Pre-trained, T তে Transformer সুতরাং এর পূর্ণরূপ হচ্ছে- Generative Pre-trained Transformer। সহজ ভাষায় বলতে গেলে চ্যাট জিপিটি (ChatGPT) হচ্ছে একটি কৃত্রিম চ্যাটবট, এটি বৃহত্তর ভাষা মডেলের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যা ব্যবহারকারীদের সাথে সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতে পারে। চ্যাট জিপিটি একটি প্রশিক্ষিত ট্রান্সফরমার মডেল, যা মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোনো বিষয়ে সহজেই বুঝতে পারে এবং তার উত্তর দিতে পারে। এবং এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে মার্কিন টেক জায়ান্ট কোম্পানি ওপেনএআই (OpenAI)।
চ্যাট জিপিটির ইতিহাস
ইলন মাস্ক ও স্যাম আল্টমান ২০১৫ সালে open ai নামক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে যা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু পরবর্তি ২ বছরের মাঝেই ইলন মাস্ক কোম্পানির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে প্রজেক্টটিতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা যায়। পরবর্তীতে microsoft company এতে প্রচুর পরিমাণে ইনভেস্ট করে এবং ২০২২ সালের ৩০ শে নভেম্বর এটি প্রোটো টাইপ হিসেবে বাজারে আসে।
চ্যাট জিপিটি কিভাবে ব্যবহার করবো
চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করতে হলে সর্বপ্রথম open ai এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এরপর প্রথমেই আপনাকে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার পরেই আপনি চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে চ্যাট জিপিটি ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায়, তবে ভবিষ্যতে হয়তো এর অ্যাডভান্স ফিচার ব্যবহার করার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে।
Chat GPT কেন ব্যবহার করবেন?
যেহেতু চ্যাট জিপিটি একটি কনভারসেশনাল ai তাই চ্যাট জিপিটিকে যেকোনো প্রশ্নোত্তরের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের কাজের ফরম্যাটিং বা আউটলাইন তৈরি করে নিতে পারি। চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের গ্রাহকদের সাথে আরও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারে এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে পারে। চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে, শিক্ষার্থীরা নতুন বিষয় শিখতে এতে তাদের অনেক সময় বেঁচে যাবে। এছাড়াও চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে, আমরা গল্প লিখতে, কবিতা লিখতে এবং অন্যান্য সৃজনশীল কাজে ব্যবহার করতে পারি।
চ্যাট জিপিটির সুবিধা
বর্তমান সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল কিছুই এখন চ্যাট জিপিটির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চ্যাট জিপিটির অনেকগুলো সুযোগ সুবিধা রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
১। অনুবাদ করার জন্য
বেশ কিছুদিন আগেও যেকোনো লেখা অনুবাদ করার জন্য আমাদের অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হতো। কখনো এই সফটওয়্যারের ব্যবহার তো কখনো ওই সফটওয়্যার ব্যবহার। কিন্তু চ্যাট জিপিটি এসে আমাদের এই সমস্যার এক প্রকার সমাধান দিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর যেকোনো ভাষার, যে কোনো লেখাকে যদি অনুবাদ করতে হয়, এক্ষেত্রে ওই লেখাকে অনুবাদ করার জন্য আমরা চ্যাট জিপিটির সাহায্য নিতে পারি। চ্যাট জিপিটি লেখা অনুবাদের কাজে অত্যন্ত দক্ষ।
২। লেখার বানান ঠিক করার জন্য
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছে যাদের ইংরেজি লিখতে গেলে হাত কাঁপে। কি না কি, ভুল হয় বানানের মাঝে ! তাদের সমস্যা দূর করার জন্য তারা চ্যাট জিপিটি ব্যাবহার করতে পারে। চ্যাট জিপিটিতে আপনার লেখা পেস্ট করে দিয়ে চ্যাট জিপিটিকে কারেকশন করার কমান্ড দিবেন ব্যাস তাহলেই হবে চ্যাট জিপিটি নিজে থেকেই আপনার লেখার স্পেলিং ঠিক করবে ও পাংচুয়েশন ঠিক করে দিবে।
৩। কোডিং করার জন্য
চ্যাট জিপিটিকে ব্যবহার করে আমরা যে শুধু প্রশ্নের উত্তর পাবো তাই নয়, আপনি চাইলে চ্যাট জিপিটিকে দিয়ে কোডিংও করাতে পারবেন। আপনি যদি চ্যাট জিপিটিকে ব্যবহার করে যে কোনো ধরনের কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজে কোড লিখতে বলেন, চ্যাট জিপিটি আপনার কমান্ড অনুযায়ী আপনাকে কোডিং করে দেবে।
৪। ক্রিয়েটিভ কিছু লেখার জন্য
চ্যাট জিপিটিকে যেকোনো ধরনের, ক্রিয়েটিভ লেখা, কনটেন্ট লেখা, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন, প্রতিবেদন ইত্যাদি সহ যেকোনো ধরনের লেখার কমান্ড করলেই লিখে দিতে পারে। চ্যাট জিপিটিকে গল্প কবিতা উপন্যাস ইত্যাদি লেখার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। আম্মার রেসি নামের এক ব্যক্তি চ্যাট জিপিটিকে দিয়ে বইও লিখিয়ে নিয়েছে।
৫। একাকীত্ব কাটাতে
চ্যাট জিপিটি একটি কনভারসেশনাল ai তাই চ্যাট জিপিটির সাথে কথা আদান প্রদান করা যায়। অনেককেই দেখা যায় একাকি সময় কাটায়। তারা চাইলে চ্যাট জিপিটির সাথে কথা বলে ও প্রশ্ন করে সময় কাটাতে পারে, এতে তাদের জ্ঞানের পরিধি আরো বেশি বিস্তৃত হবে।
৬। ইমারজেন্সি যে কোন প্রয়োজনে
মনে করুন আপনার আত্মীয়-স্বজনরা আপনাদের বাসাতে বেড়াতে এসেছে হঠাৎ করে ছোট বাচ্চারা খেলতে গিয়ে হাত কেটে ফেললো এই অবস্থায় আপনি কি করবেন। আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে এখন কি ঔষধ ব্যবহার করা উচিত? আপনি চ্যাট জিপিটিকে প্রশ্ন করতে পারেন। চ্যাট জিপিটি আপনাকে তাৎক্ষণিক সমাধান দেবে।
চ্যাট জিপিটির অসুবিধা
চ্যাট জিপিটির যেমন প্রচুর সম্ভাবনাময় উপকারী দিক রয়েছে। তেমনি একে ব্যবহার করে অপরাধীচক্রের অপরাধ করার প্রবণতার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।চ্যাট জিপিটির কিছু অপকারিতা বা অসুবিধা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১। ফিশিং মেইল তৈরি
চ্যাট জিপিটি দিয়ে আরও দ্রুত ও রিয়েলিস্টিক ফিশিং মেইল তৈরি করা সম্ভব। যার ফলে ফিশিং মেইলের সহজলভ্যতা তৈরি হচ্ছে ও হ্যাকাররা দ্রুত সময়ে গ্রাহকদের ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট, ব্যাংক একাউন্টের এক্সেস পেয়ে যাচ্ছে।
২। ক্রিয়েটিভিটি না থাকা
মনে করুন দুইজন বন্ধু একই কলেজে পড়ে। তাদের ক্লাসের শিক্ষক তাদেরকে কোন একটি এসাইনমেন্ট দিল। তারা উভয়ি যখন অ্যাসাইনমেন্ট করতে লাগলো, কোন একটি প্রশ্নে তারা দুইজনেই আটকে গেল তখন তাদের মাথায় আসলো যে তারা চ্যাট জিপিটির সাহায্য নেবে। তারা উভয়ি চ্যাট জিপিটিকে প্রশ্নটি করলো, চ্যাট জিপিটি তাদের দুজনকেই একই উত্তর দেবে। এ থেকে সহজে বোঝা যায় চ্যাট জিপিটি সবাইকেই প্রায় একইভাবে একই রকম উত্তর দিয়ে থাকে। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় চ্যাট জিপিটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
৩। শতভাগ সঠিক উত্তর দিতে না পারা
চ্যাট জিপিটি একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ২০২২ সালের আগ পর্যন্ত একে ট্রেইন আপ করানো হয়েছে যাতে এটি যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। কিন্তু এরপরেও চ্যাট জিপিটির মাঝে কিছু বিষয়ে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়।যেমন ২০২২ সালের পরবর্তী যে কোন ইভেন্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করলে চ্যাট জিপিটি সঠিক উত্তর দিতে পারেনা। যে কোন গবেষণালব্ধ প্রশ্নের ক্ষেত্রে চ্যাট জিপিটি শতভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনা যা চ্যাট জিপিটি ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত হতাশা জনক। তবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিনকে দিন আরো বেশি ইনফরমেশন সমৃদ্ধ হচ্ছে যা ভবিষ্যতে আরও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
Google VS Chat GPT
গুগল মূলত একটি সার্চ ইঞ্জিন। যেখানে আমরা কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলে গুগল আমাদেরকে প্রচুর রেজাল্ট শো করে। গুগল আমাদেরকে রিলিভেন্ট রেজাল্ট দেখায় এবং সেই রেজাল্ট থেকে আমরা আমাদের পছন্দসই বিষয়বস্তু খুঁজে নেই। অপরদিকে চ্যাট জিপিটি একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট যাকে আমরা প্রশ্ন করলে সে আমাদের সরাসরি উত্তর দিতে সক্ষম।
নিম্নে গুগল এবং চ্যাট জিপিটির কিছু মৌলিক পার্থক্য তুলে ধরা হলোঃ
- গুগলে যে কোন বিষয়ে সার্চ দিলে আমরা রিলিভেন্ট ইমেজ, ভিডিও,আর্টিকেল ইত্যাদি খুঁজে পাই। অপরদিকে চ্যাট জিপিটি আমাদেরকে শুধুমাত্র টেক্সট রেজাল্টই শো করে।
- যে কোন প্রশ্নের উত্তরে গুগল আমাদের জন্য অনেক রেজাল্ট শো করে সেখান থেকে আমরা আমাদের মন মত উত্তর খুঁজে নিতে পারি। অপরদিকে চ্যাট জিপিটি তার ট্রেইনআপ করা উত্তরই আপনাকে দেখাবে।
- গুগলে যে কোন আর্টিকেলের টপিকে প্রশ্ন করলে সে আপনাকে কিছু রিলিজেন্ট উত্তর দেখাবে বা সাজেশন দেবে অপরদিকে চ্যাট জিপিটি একই প্রশ্ন করলে সে আপনাকে সরাসরি উত্তর দান করবে।
চ্যাট জিপিটি কি চাকরির বাজার দখল করবে
প্রাচীনকালে মানুষ হাতে করে কাপড় সেলাই করত। যখন বাজারে প্রথম সেলাই মেশিন আসলো তখন সবাই ভাবতে থাকলো সেলাই মেশিনের ফলে বুঝি হাতে বোনা কাপড়ের কাজের লোকেরা চাকরি হারাবে। পরিস্থিতি কিন্তু একদম আলাদা হয়ে গেল, বরং মেশিন আসার ফলে কাপড় উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি পেল এবং মেশিনকে অপারেট করার মতো লোকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকলো। ঠিক তেমনি বলা যায় চ্যাট জিপিটির ক্ষেত্রে, চ্যাট জিপিটিকে ইতিমধ্যেই ছোটখাটো বেশ কিছু কাজের রিপ্লেস হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাই যারা চ্যাট জিপিটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবে তারা কর্ম ক্ষেত্রে বাকিদের তুলনায় অনেকাংশেই এগিয়ে যাবে।
চ্যাট জিপিটি কি সার্চ ইঞ্জিনগুলোর চাহিদা দখল করবে?
অদূর ভবিষ্যতে চ্যাট জিপিটি সার্চ ইঞ্জিন গুলোর চাহিদা দখল করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে চ্যাট জিপিটি ব্যবহারকারীদের করা প্রশ্নগুলোকে ন্যাচারাল ও সুন্দরভাবে উত্তর দিতে সক্ষম। অপরদিকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক ফলাফল প্রদর্শন তার কাজ শেষ করে। কিন্তু চ্যাট জিপিটি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভূমিকা পালন করে, সে তার ব্যবহারকারীর করা প্রশ্নের উত্তর মানুষের মতো করে দিতে পারে। চ্যাট জিপিটি সার্চ ইঞ্জিনগুলি তুলনায় ব্যাপক ব্যবহারকারীরা বান্ধব ও জনপ্রিয় হচ্ছে।
চ্যাট জিপিটির বিকল্প
২০২৩ সালে চ্যাট জিপিটির বিকল্প হিসেবে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি চালু হয়েছে হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে Bard AI, Blenderbot AI, Perplexity AI, Jasper AI, ও Chatsonic অন্যতম। বর্তমান অনলাইন মার্কেটে চ্যাট জিপিটির বিকল্প চ্যাট বট হিসেবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তাছাড়া চ্যাট জিপিটি প্রিমিয়াম করার ফলে অনেকেই এখন এ সকল বিকল্প আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট কে ব্যবহার করছে। তার মধ্যে গুগলের তৈরি Bard AI অল্প সময়ে ব্যাপক ব্যবহারকারীর মন জয় করে ফেলেছে কোন কোন সময় এটি চ্যাট জিপিটির চাইতেও ভালো ফলাফল প্রকাশ করতে সম্ভব। তাছাড়া এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টিটি গুগলের দ্বারা তৈরি হওয়ার ফলে নিরাপত্তার ব্যাপারে ঝুঁকি অনেক কম রয়েছে।
শেষ কথা
বর্তমানে পুরো পৃথিবীতে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ চ্যাট জিপিটি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এক্সট্রা কিছু ভ্যালু অ্যাড করেছে। অনেক বিষয় আরো সহজ হয়ে গিয়েছে। তবে এই ধরনের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছুটা সচেতনতা কাম্য, এই ধরনের সফটওয়্যার গুলো যেন আমাদের মৌলিকতা ও উদ্ভাবনী সক্ষমতাকে ধ্বংস না করে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.