কভার লেটার আমাদের কর্পোরেট লাইফের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। যেকোনো চাকরি বা কাজের আবেদনের জন্য সিভির সাথে অবশ্যই কভার লেটারকে যুক্ত করতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজকাল অনেক আবেদনকারী সিভির সাথে Cover Letter ছাড়াই আবেদন করে থাকে যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও আন প্রফেশনাল। কেননা যে প্রতিষ্ঠানে আমি চাকরির জন্য আবেদন করছি সেখানে আমার যোগ্যতাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে নিয়োগকর্তা অন্যান্য আবেদনকারীর তুলনায় আমাকে অন্য চোখে দেখে। দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটি সুন্দর সিভি ও কভার লেটার অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
Table of Contents
কভার লেটার কি? কভার লেটার কেন প্রয়োজন?
কভার লেটার হল একটি চিঠি যা একটি নির্দিষ্ট চাকরির জন্য আবেদন করার সময় সিভি ও পোর্টফোলিও এর সাথে পাঠানো হয়। এটি একটি প্রার্থীর যোগ্যতা এবং চাকরির প্রতি আগ্রহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করে, এবং কেন সে নির্দিষ্ট চাকরির জন্য উপযুক্ত তা ব্যাখ্যা করে। এক কথায় বলতে গেলে এটি একটি আবেদন পত্র যা নিয়োগকর্তাদের উদ্দেশ্যে লেখা হয়।
কভার লেটারের উদ্দেশ্য হল একজন নিয়োগকর্তার কাছে চাকরির আবেদনকারী প্রার্থীর জন্য একটি প্রথম ইতিবাচক ছাপ তৈরি করা। এটি প্রার্থীর যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাকে হাইলাইট করে, এবং কেন সে নির্দিষ্ট চাকরির জন্য উপযুক্ত তা ব্যাখ্যা করে। একটি ভাল Cover Letter একটি প্রার্থীকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে এবং একটি চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেতে সাহায্য করতে পারে।
কভার লেটার কত প্রকার?
কভার লেটার প্রধানত তিন প্রকার যথাক্রমেঃ
১.অ্যাপ্লিকেশন লেটার
অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য লোক খোঁজার লক্ষ্যে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়। যে সকল প্রতিষ্ঠান এই ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে সেখানে চাকরিতে এপ্লাই করার জন্য, যে ধরনের Cover Letter ব্যবহার করা হয় তাকে অ্যাপ্লিকেশন লেটার বলে।
২.প্রসপেক্টিং লেটার
এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সেখানের এমপ্লয়ী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি বা বিজ্ঞাপন দেয়নি। কিন্তু আপনি ধারণা করলেন যে তারা লোক নিয়োগ দিতে পারে এবং আপনি চাকরির জন্য এপ্লাই করলেন। একে প্রস্পেক্টিং লেটার বলে বা আমরা একে চাকরি খোঁজার লেটারও বলতে পারি।
৩.নেটওয়ার্কিং লেটার
অনেক সময় কোম্পানিগুলোতে লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্যে কোন প্রকার বিজ্ঞাপন ব্যবহার না করে, তাদের কোম্পানির স্টাফদের পরিচিত জনদের মধ্যে লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানির উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করার জন্য যে লেটার তৈরি করা হয়, তাকে নেটয়ারকিং লেটার বলে।
কভার লেটারে কি অন্তর্ভুক্ত করতে হয়?
কভার লেটারে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া উচিত। কভার লেটার এবং সিভি যেন একই রকম না হয় এই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একে সিভির সম্পূরক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে আপনার যোগ্যতার বর্ণনা না দিয়ে বরং যে কাজের জন্য আপনি এপ্লাই করছেন সে কাজের প্রতি আপনার ডেডিকেশন কে ফুটিয়ে তোলা উচিত।
Cover Letter আপনাকে উক্ত পদের নিয়োগ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে তাই আপনার উচিত অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সুরুচিপূর্ণভাবে কভার লেটারের কাজ সম্পূর্ণ করা, কভার লেটারে যেন কোন প্রকারের বানান ভুল না থাকে এবং ভাষা যেন সহজ ও সাবলীল হয়।
আপনার Cover Letter কে আরও বেশি কার্যকরী করতে, আপনার আবেদনকৃত চাকরির সাথে আপনার পুরনো চাকরির অভিজ্ঞতা দক্ষতার সাথে তুলে ধরুন। চাকরিটি করার বিষয়ে আপনি কতটা আগ্রহী ও কাজটি শিখতে আপনি কতটা পরিশ্রম করেছেন বা করতে পারবেন তা তুলে ধরুন। এতে আপনি আপনার নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষনে সক্ষম হবেন।
কোন কোন বিষয়গুলো কভার লেটারে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত
কিছু কিছু বিষয় কভার লেটারে যুক্ত না করাই উত্তম। এমনকি কিছু বিষয় আপনি যদি আপনার কভার লেটারে যুক্ত করেন তা আপনার কভার লেটারটিকে বাতিলও করে দিতে পারে। তাই কভার লেখার সময় বেশ কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে যেমনঃ
- কভার লেটারে আপনার যোগ্যতাকে ফুটিয়ে তুলতে হবে বা সেই কাজে আপনি কি রকম দক্ষ তাই নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে কিন্তু কোনভাবেই আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন বা পার্সোনাল কোন কাজে আপনি কি রকম দক্ষ সে বিষয়ে কোন আলোচনা করা যাবে না।
- আপনি চাকরি করলে আপনার কেমন বেতন প্রয়োজন বা কি রকম সুযোগ-সুবিধা হলে আপনি চাকরি করবেন এই ধরনের কোন প্রশ্ন কভার লেটারে করা যাবে না।
- কভার লেটারে অতিরিক্ত কোন বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না। কভার লেটারটিতে অল্প কথায় সাবলীলভাবে আপনার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
- কঠিন কোন শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা যাবে না। এমন ধরনের শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করতে হবে যা পড়তে বা বুঝতে নিয়োগকর্তাদের কোন প্রকার বেগ পেতে হয় না।
Cover Letter কিভাবে সাজাতে হবে?
একটি সাজানো-গোছানোর সুন্দর Cover Letter খুব সহজেই নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সুন্দরভাবে কভার লেটার লেখার জন্য কিছু নিয়ম ফলো করতে পারিঃ
- প্রথমত আপনি কোন কাজের জন্য এপ্লাই করছেন তা থাকা উচিত।
- আপনার যদি কোন ধরনের রেফারেন্স থাকে তা উল্লেখ করা উচিত বা আপনি কিভাবে কাজ সম্পর্কে জানলেন, শিখলেন আপনি চাইলে তাও উল্লেখ করতে পারেন।
- আপনি নিজেকে কোন কাজের জন্য যোগ্য মনে করেন তা উল্লেখ করতে পারেন।
- কোন কারণে বা কেন আপনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক তা উল্লেখ করুন।
এই কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রেখে যদি আপনার কভার লেটার তৈরি করেন, তাহলে আশা করা যায় আপনি নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবেন।
সুন্দর কভার লেটার লেখার টিপস
আপনি যে পদের জন্য এপ্লাই করছেন আপনার কভার লেটারে সেই পদ সম্পর্কিত বিষয়বস্তু যেন ফুটে ওঠে। যে প্রতিষ্ঠানের জন্য Cover Letter লিখবেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জেনে নেবেন, এক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য কালেক্ট করতে পারেন। আপনি যদি বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর দেন ও গুছিয়ে লেখেন তাহলে আপনার কভার লেটারটি আরো বেশি চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় হবে।
১। ইংরেজি ভাষার ব্যবহার
কর্পোরেট জবের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা জানা এক প্রকারের আবশ্যকীয় বিষয়। তাই আপনার প্রফেশনালিজমকে ফুটিয়ে তুলতে ইংরেজি ভাষার বিকল্প নেই। কভার লেটারটি লিখতে অবশ্যই বিশুদ্ধ ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে হবে, স্পেলিং বা গ্রামারে কোন প্রকার ভুল হওয়া যাবে না।
২। আকর্ষণীয় শিরোনাম ব্যবহার করা
শিরোনামেই আপনার নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। কোনভাবেই নিজের ছদ্মনাম বা ভুল ঠিকানা দেয়া যাবে না। আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য আপনার মোবাইল নাম্বার ও ইমেইল একাউন্ট দিতে পারেন।
৩। সম্মানজনক অভিবাদন দিয়ে শুরু করা
অভিবাদন শুরু করার জন্য Mr./Ms./Dr. সম্বোধন করতে পারেন। আপনি যদি নিয়োগকর্তার নাম জানেন তাহলে তার নামের শেষ অংশ ব্যবহার করতে পারেন যেমন নিয়োগ কর্তার নাম যদি হয়ে থাকে Mr. Abir Hasan তাহলে আপনি Mr. Hasan বলে সম্বোধন করতে পারেন। আবার আপনার যদি নিয়োগকর্তার নাম জানা না থাকে তাহলে আপনি Hiring Manager বলে সম্বোধন করতে পারেন।
৫। সহজ সাবলীল ভাবে নিজের পরিচিতি তুলে ধরা
প্রথমেই আপনার পরিচয় দিতে হবে। এই পরিচয় প্রদানের সময়ে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এরপরে আপনি এই নিয়োগ দান পদ্ধতি সম্পর্কে কিভাবে জানলেন তা সম্পর্কে বলুন।
৬। মূল অংশে নিজের গুনাগুন তুলে ধরা
আপনি এই চাকরিতে কেন আগ্রহী ও এই পদের জন্য কেন আপনিই সেরা, এই বিষয়ে কিছু কথা আলোচনা করুন। আপনার যদি এই রিলেটেড জবের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তবে আপনার অভিজ্ঞতা ও সাকসেস স্টোরি শেয়ার করতে পারেন।
৭। পরিসমাপ্তি
আপনি সেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে কতটা আগ্রহী বা উন্মুখ হয়ে আছেন তা তুলে ধরুন। আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে আপনি কিভাবে সেই প্রতিষ্ঠানটির আরো উন্নতি সাধন করতে পারবেন তা তুলে ধরুন। সর্বশেষে নিয়োগকর্তাকে আপনার যোগ্যতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য আবেদন করুন। শেষের পরিচ্ছেদে Thank You, Best Regards ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে নিয়োগকর্তাকে বিদায় জানাবেন।
৮। নিজের স্বাক্ষর দেওয়া
সব পরিচ্ছেদ লেখা শেষ করে আপনার নামের স্বাক্ষর সংযুক্ত করবেন। ইমেইল করলে টাইপ করে নিজের নাম লিখবেন।
কভার লেটারের ফরমেটিং
কভার লেটার কে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করার জন্য সুনির্দিষ্ট ফরম্যাটে থাকা অত্যন্ত জরুরী। কভার লেটার যেন সহজ, সাবলীল, সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ হয় এ বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। লেখার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে লেখার ফন্ট যেন খুব বেশী ছোট বা বড় না হয়। লেখাকে সুন্দর ভাবে ফরম্যাটিং করার জন্য লেখার বাম পাশে এক ইঞ্ছি জায়গা রেখে দিতে হবে। প্রতিটি শিরোনাম পরিচ্ছেদ পরিসমাপ্তি এবং সাক্ষরের মাঝে স্পেস রাখতে হবে। লেখাটি এক পৃষ্ঠায় শেষ করার চেষ্টা করতে হবে।
সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিং
কভার লেটারের ওপর নিয়োগদান পক্রিয়ার গুরুত্তপুর্ন অংশ নির্ভর করে। কভার লেটারে কোন ভুল ধরা পড়লে তা নিয়োগদানের ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার কম্পিটেটরদের থেকে পিছিয়ে রাখবে, তাই কভার লেটার জমা দেয়ার আগে বার বার রিডিং পড়ে দেখুন কোন ভুল হয়েছে কি না বা কোন পরিবর্তন করতে হবে কি না এতে আপনার কভার লেটারটি সুন্দর ও নির্ভুল হবে।
প্রফেশনাল কভার লেটারের নমুনা
আমরা ইতিমধ্যে বুঝে গেছি যে একটি চাকরির জন্য আবেদন করতে কভার লেটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি প্রফেশনাল কভার লেটার আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করার পাশাপাশি আপনার অতিরিক্ত মেধা ফুটিয়ে তুলবে। নিম্নে আমরা একটি ইংরেজি কভার লেটার নমুনা তুলে ধরছি।
শেষকথা
নিয়োগদান পক্রিয়ায় সিভির মত কভার লেটারও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Cover Letter পড়ে আপনার প্রতি ফার্স্ট ইম্প্রেশন সৃষ্টি হতে পারে আবার কভার লেটার খারাপ হওয়ার কারনে আপনাকে আন প্রফেশনালও বলা হতে পারে, তাই Cover Letter লেখার সময় উপরক্ত পোষ্টে লেখা বিষয়াদি লক্ষ করলে, একটি প্রফেশনাল কভার লেটার লেখা সম্ভব।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.