ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের একটি জনপ্রিয় কাজের নাম হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি। ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যান্য কাজের তুলনায় ডাটা এন্ট্রির কাজ অনেক সহজ। কম্পিউটারের সঠিক ব্যবহার এবং টাইপিং এ মোটামুটি দক্ষতা থাকলেই যে কেউ ডাটা এন্টির কাজ করতে পারে। আপনি যদি সহজ কোনো কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তাহলে ডাটা এন্ট্রি (Data Entry is the Perfect Choice for You) হচ্ছে আপনার জন্য বেস্ট অপশন।
Table of Contents
আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের ফ্রিল্যান্সিং বা কম্পিউটার ভিত্তিক কাজের প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু ভালো কোনো কম্পিউটার বা এডভান্সড লেভেলের দক্ষতা কিংবা অনলাইন জগত সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে, ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার কিভাবে শুরু করবে তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না। তাদের জন্য Data Entry কাজ হতে পারে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সবচাইতে ভালো একটি মাধ্যম।
বর্তমানে সরকারি বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে অনেক ভালো স্যালারিতে Data Entry স্পেশালিস্ট (Data Entry Specialist) নিয়োগ দেওয়া হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন, ক্যারিয়ার হিসেবে ডাটা এন্ট্রি জব কতটা গুরুত্বপূর্ণ! তাহলে চলুন, আর দেরি না করে, Data Entry সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক আজকের এই পোস্টে।
✨কোন IT স্কিল জানা নেই, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কেও কোনো অভিজ্ঞতা নাই। আবার শুধু চাকরি করে ভালো টাকা আয় করতে পারছেন না। যদি আপনিও একটা ভালো লাইফস্টাইলের জন্য ও পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং করতে চান অথবা পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা ইনকাম করতে চান তাহলে এই কোর্সটি আপনার জন্য।
তাহলে দেরী কেন? আজই এনরোল করে শুরু করুন ঘরে বসে আয় করা!
ডাটা এন্ট্রি কি? (What is Data Entry?)
ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে লেখিত কোনো তথ্য, চিত্র, উপাত্ত, বা বিষয়বস্তুকে ইলেকট্রনিক ফরম্যাটে রূপান্তর করে তা কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত করার প্রক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে সাধারণত ডাটা ইনপুট করে একটি নির্দিষ্ট সিস্টেম ডাটাবেসে ডাটা সংরক্ষণ করা হয়। ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়। এটি আমাদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি ডাটা সংরক্ষণ, ও প্রক্রিয়াকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কোনো সফটওয়্যার এর সাহায্যে কিবোর্ড অথবা ভয়েস ব্যবহার করে কম্পিউটারে বিভিন্ন তথ্য ইনপুট দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের তথ্য, ডকুমেন্ট, বা ছবি ইত্যাদির হার্ডকপিকে সফট কপিতে রূপান্তর করাই হচ্ছে ডেটা এন্ট্রির প্রধান কাজ। আরো সহজ ভাবে বললে, Data Entry হচ্ছে কোনো এক সোর্স থেকে অন্য কোনো সোর্সে কোনো কিছু এন্ট্রি করা বা সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া।
Data Entry বলতে শুধু যে কোনো লেখা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় লিখতে হবে বিষয়টা এমন নয়। ডাটা এন্ট্রির কাজ এমনও হতে পারে যে, কোনো অডিও, ভিডিও, বা পডকাস্ট ফাইল শুনে ও দেখে তা লেখাতে কনভার্ট করতে হবে।
ডাটা এন্ট্রি চাকরির ধরন
ডাটা এন্ট্রির কাজ অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং কাজের মত ঘরে বসেই করা যায়। আবার অনেক কোম্পানি রয়েছে যারা চায় যে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তাদের অফিসে বসেই কাজ করবে। এসবের উপর ভিত্তি করে Data Entry চাকরিকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১। ফ্রিল্যান্সিং / রিমোট জব
ফ্রিল্যান্সিং বা রিমোট Data Entry কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো অফিসে প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টের জন্য রিমোটলি কাজ করবেন। পড়াশোনা এবং ফুল টাইম চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং ডাটা এন্ট্রির কাজ করে পেসিভ ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব।
২। ফুলটাইম চাকরি (In-house Job)
এই ধরনের কাজ সাধারণত কোনো কোম্পানির জন্য করতে হয়। এক্ষেত্রে একাধিক প্রজেক্টে কাজ করতে হয় এবং সাময়িকভাবে কোনো প্রজেক্ট না থাকলেও আপনি চাকরিতে বহাল থাকবেন। ফুল টাইম Data Entry চাকরির ক্ষেত্রে আপনাকে নির্দিষ্ট স্থান এবং নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে হবে। ফুল টাইম চাকরি সাধারণত স্থায়ী হয় এবং এর জন্য মাসিক ভিত্তিতে পেমেন্ট করা হয়।
ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ কি কি?
তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে সব তথ্যই এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। ক্রমবর্ধমান যুগের সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাটা এন্ট্রি করে সংরক্ষণ করা। তারই ধারাবাহিকতায় চাহিদা বাড়ছে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের এবং একই সাথে বাড়ছে ডাটা এন্ট্রি কাজের মাধ্যমে আয়ের সুযোগ। একজন প্রফেশনাল ডেটা এন্ট্রিএক্সপার্ট ডাটা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডাটা ইনপুট করা, ডাটা ফরমেটিং করা, ডাটার ভুল সংশোধন করা, সর্বশেষ ডাটাকে একটি নির্দিষ্ট ডাটাবেজে সংরক্ষণ করার কাজই হচ্ছে একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের প্রধান কাজ।
ডাটা এন্ট্রির প্রকারভেদ
তথ্য এবং কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে ডাটা এন্ট্রি জব কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমনঃ টাইপিং, এক্সেল Data Entry, স্পেল চেকিং, ট্রান্সলেশন, ডাটা কনভার্শন, কপি-পেস্ট, ইমেজ টু টেক্সট, অডিও টু টেক্সট, ভিডিও টু টেক্সট, ক্যাপচা এন্ট্রি, ইত্যাদি।
১। টাইপিং (Typing)
এই পদ্ধতিতে কোনো তথ্য দেখে দেখে টাইপ করতে হয়। টাইপ করার জন্য আপনি চাইলে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক ব্যবহার করতে পারেন। টাইপ করা শেষ হলে সেগুলোকে একটি ফাইল হিসেবে তৈরি করে ক্লাইন্টকে জমা দিতে হবে।
২। এমএস এক্সেল (MS-Excel)
বিশ্বের সব কোম্পানিই তাদের কোম্পানির সেলস, কাস্টমার রিভিউ, ফিডব্যাক, এবং হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহার করে থাকে। কারণ মাইক্রোসফট এক্সেল এর সাহায্যে Data Entry কাজ অনেক সহজে করা যায়। মাইক্রোসফট এক্সেলে একটি বিশাল স্প্রেডশিট থাকে যেখানে অনেকগুলো ঘর করা থাকে। সেখানে অনেক সহজেই Data Entry করা যায় এবং প্রয়োজন অনুসারে এডিট করা যায়। বর্তমানে এই ধরনের ডাটা এন্ট্রির কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে।
৩। স্পেল চেকিং (Spell Checking)
স্পেল চেকিং (Spell Checking) বিষয়টি হলো এমন যে, আগে থেকেই লেখা কোনো একটি আর্টিকেল, উপন্যাস, বা কোনো টেক্সট ফাইল চেক করে ভুলগুলো সঠিক করা। মূলত লেখাটিতে কোনোবানান, শব্দ, অথবা ব্যাকরণগত কোনোসমস্যা রয়েছে কিনা সে বিষয়টি চেক করে সঠিক করাই হলো স্পেল চেকিং।
৪। ট্রান্সলেশন (Translation)
এই কাজটি খুব সহজ। এই ধরনের Data Entry কাজ করার জন্য কোনো লেখাকে একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করতে হয়। এক্ষেত্রে সোর্স ফাইলটি অডিও ফাইল আকারেও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বিখ্যাত ইংরেজি ভাষার অডিও বুককে বাংলা ভাষায় ট্রান্সলেট করা হল ট্রান্সলেশন Data Entry জব।
৫। ডাটা কনভার্শন (Data Conversion)
অনেক সময় কোনো ফাইল বা তথ্যের ফরমেট বদলানোর প্রয়োজন পড়ে। যেমন একটি পিডিএফ ফাইলকে এডিট করার জন্য ওয়ার্ড ফাইলে রূপান্তরের প্রয়োজন হয়। একটি ফাইল ফরমেট কে এভাবে অন্য একটি ফাইল ফরমেট এর রূপান্তরের কাজকে ডাটা কনভার্শন বলে।
৬। কপি-পেস্ট (Copy-Paste)
কপি পেস্ট বলতে কি বুঝায় তা আমরা সবাই বুঝি। কপি পেস্ট বলতে বুঝায় এক জায়গা থেকে কপি করে অন্য জায়গায় পেস্ট করা। হ্যাঁ, এই ধরনের ডাটা এন্ট্রির কাজ করেও ইনকাম করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কপি পেস্ট ডেটা এন্ট্রি অনেক কাজ রয়েছে। আর এই কাজগুলো তুলনামূলক সহজ হওয়ায় যে কেউ এই কাজগুলো করে ভালো মানের একটি ইনকাম জেনারেট করতে পারবে।
৭। ইমেজ টু টেক্সট (Image to Text)
ইমেজ টু টেক্সট ডাটা এন্ট্রির কাজটিও খুবই সহজ। এক্ষেত্রে কোনো ডকুমেন্ট এর ছবি থেকে সেটাকে টেক্সট ফাইলে রূপান্তর করতে হবে। ছবিতে যা যা থাকবে সেগুলো ঠিক ওইভাবেই লিখে ক্লায়েন্টকে দিতে হবে। এটি হলো ইমেজ টু টেক্সট Data Entry জব।
৮। অডিও টু টেক্সট (Audio to Text)
কোন অডিও শুনে সেটাকে টাইপ করার কাজটিই হল অডিও টু টেক্সট Data Entry Job। এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট আপনাকে একটি অডিও ফরমেট দিবে। সেই অডিওটি শুনে তা টেক্সট আকারে লিখতে হবে এবং ওই ফাইলটি ক্লাইন্টকে প্রদান করতে হবে।
৯। ভিডিও টু টেক্সট (Audio to Text)
ভিডিও টু টেক্সট ডাটা এন্ট্রির কাজটি অনেকটা ইমেজ টু টেক্সট এর মতই। ইমেজ টু টেক্সট এর ক্ষেত্রে ছবি দেখে দেখে সেটাকে টেক্সট ফাইলে রূপান্তর করতে হতো। আর এখানে ক্লায়েন্ট আপনাকে কোনো ভিডিও দিবে। সেই ভিডিওটি দেখে তাতে থাকা তথ্য লিপিবদ্ধ করে ক্লাইন্টকে জমা দিতে হবে।
১০। ক্যাপচা এন্ট্রি (Captcha Entry)
ক্যাপচা এন্ট্রি এবং ইমেজ টু টেক্সট একই রকম মনে হলেও এই দুটো বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। ক্যাপচা এন্ট্রির ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন বা সংখ্যার প্রদর্শিত হবে। ঐ সাংকেতিক চিহ্নগুলোকে সঠিকভাবে এন্ট্রি করাই হলো ক্যাপচা এন্ট্রির কাজ। ক্যাপচা এন্ট্রির কাজটি তুলনামূলক সময় সাপেক্ষ। কারণ ক্যাপচা এন্ট্রি করে ১০০ টাকা ইনকাম করতে হলে ১০০০ টি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে।
ডাটা এন্ট্রি করতে কি কি যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে?
Data Entry কাজ তুলনামূলক সহজ হলেও কিছু বিষয়ে ভালো দক্ষতা অর্জন না করলে ভবিষ্যতে এই সেক্টরে কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই সফলভাবে Data Entry অপারেটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। একজন ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্ট হিসেবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে যেসব যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে সেগুলো হলোঃ
১। কম্পিউটারে বেসিক জ্ঞান রাখা
ডাটা এন্ট্রির কাজ অনলাইন জগতের অন্যান্য কাজের তুলনায় সহজ ঠিকই কিন্তু কম্পিউটারের অন্তত বেসিক জ্ঞান জানা জানা না থাকে এই কাজটিই অনেক কঠিন মনে হবে। Data Entry চাকরি করতে হলে টাইপিং এর পাশাপাশি কম্পিউটারে বেসিক বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। যেমনঃ কম্পিউটারে কিভাবে ফাইল সেভ করতে হয়, কিভাবে Rename করতে হয়, কিভাবে ইন্টারনেট এবং ব্রাউজারগুলো ব্যবহার করতে হয়, এবং কম্পিউটারের প্রিন্টার, রাউটার, ইউপিএস কিভাবে কাজ করে ইত্যাদি।
২। দ্রুত টাইপ করার ক্ষমতা
Data Entry কাজের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট হল টাইপিং স্পিড। কারণ এ কাজটি পুরোটাই টাইপিং এর উপর নির্ভরশীল। টাইপিং স্পিড যত ভালো হবে তত দ্রুত Data Entry করা যাবে। আপনি যদি মিনিটে অন্তত ত্রিশটি শব্দ টাইপ করতে না পারেন তাহলে কোনো ডেটা এন্ট্রি জব এ আবেদনই করতে পারবেন না। শুধু তাই নয় বর্তমানে প্রায় সব ডাটা এন্ট্রি চাকরির ক্ষেত্রেই মিনিটে নূন্যতম ৪০-৫০ টি শব্দ লেখার যোগ্যতা থাকতে হয়। অর্থাৎ টাইপিং স্পিড যত বেশি হবে এই সেক্টরে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ততই বেড়ে যাবে।
৩। ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি করা
শুধু Data Entry নয় সব ধরনের কাজের জন্যই ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আর ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কাজই ইংরেজিতে হবে। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে Data Entry নিয়ে কাজ করতে চাইলে বাহিরে দেশের ক্লাইন্টের সাথে যোগাযোগের জন্য ইংরেজি জানা থাকতেই হবে। আর তাই ইংরেজি লেখা এবং পড়ার উপর ধীরে ধীরে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৪। বেশি অ্যাপ্লিকেশনের উপর জ্ঞান রাখা
ডাটা এন্ট্রির কাজটি সাধারণত কোনো সফটওয়্যার দিয়েই করতে হবে। এই ধরনের কাজ সাধারণত মাইক্রোসফট অফিস এবং গুগল ওয়ার্কস্পেসের অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করেই করতে হয়। আর তাই এসব সফটওয়্যার কিভাবে কাজ করে কিভাবে ইন্সটল করতে হয় বা কিভাবে ব্রাউজ করতে হয় সেই সম্পর্কে অবশ্যই ভালো ধারণা থাকতে হবে।
৫। রিসার্চ স্কিল বৃদ্ধি করা
Data Entry অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করার জন্য ইন্টারনেট থেকে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। আর তাই কিভাবে Google অথবা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিন থেকে রিসার্চ করে ডাটা সংগ্রহ করতে হয় সে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৬। টাইম ম্যানেজমেন্ট
ফ্রিল্যান্সিং হোক বা ফুল টাইম চাকরি উভয় ক্ষেত্রেই টাইম ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই সময়কে খুব ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে ক্লাইন্টের কাজ বুঝে নিয়ে তা দ্রুততার সাথে রিটার্ন দেওয়া খুবই জরুরী। এক্ষেত্রে একটি ডেডলাইন থাকে। এই ডেড লাইনের পরে কাজ জমা দিলে ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি অফিস হবে এবং আপনার প্রোফাইলে একটি খারাপ ফিডব্যাক দিয়ে দিবে। এতে করে পরবর্তীতে কাজ পাওয়া আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই তাই ম্যানেজমেন্ট এর ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
৭। কাজের একুরেসি বৃদ্ধি করা
যেকোনো কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যতটা না জরুরী তার থেকে বেশি জরুরী হলো কাজটি সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা। দ্রুত কাজ করার সাথে সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কাজের মধ্যে যেন কোনো ভুল না হয় বা কোনো ভুল তথ্য প্রবেশ না হয়। দ্রুত কাজ করার সাথে সাথে কাজের একুরেসিও বৃদ্ধি করতে হবে।
৮। টিমওয়ার্ক স্কিল বৃদ্ধি করা
যে কোনো চাকরি ক্ষেত্রেই টিমওয়ার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। টিমওয়ার্ক স্কিল ভালো না হলে যে কোনো কোম্পানিতে চাকরি করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। কারণ একটি কোম্পানিতে পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর থাকতে পারে যাদের সাথে মিলে মিশে আপনাকে কাজ করতে হবে। তাই টিমওয়ার্ক স্কিল যদি বৃদ্ধি না করতে পারেন তাহলে আপনি পিছনে পড়ে থাকবেন।
ডাটা এন্ট্রির চাকরি কেন করবেন?
কেন করব ডাটা এন্ট্রির চাকরি? চলুন তাহলে এই প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই। ডাটা এন্ট্রিকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। সেগুলো হলোঃ
১। সহজে শিখা যায়
ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখাটা অনেক সহজ। তাই সহজেই এই কাজটি শুরু করা যায়। চাইলে ঘরে বসেই ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখে ইনকাম শুরু করা সম্ভব।
২। নিজের পছন্দমত কাজ করা যায়
বর্তমানে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই Data Entry Operator প্রয়োজন। আর তাই এই কাজ শিখতে পারলে কাজের কোনো অভাব হবে না। ফলে আপনি আপনার পছন্দমত কাজ করতে পারবেন।
৩। কম খরচ এবং বিশেষ কোনো দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না
Data Entry কাজের জন্য সাধারণত বড় কোনো সফটওয়্যার এর প্রয়োজন হয় না। তাই এই কাজের জন্য অনেক বেশি দামের কম্পিউটার না কিনলেও চলে। আবার এসব কাজ করার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন অথবা ভিডিও এডিটিং এর মত দক্ষতাও লাগেনা। সব মিলিয়ে ডেটা এন্ট্রি কাজ কম খরচ এবং অল্প দক্ষতার সাথেই করা যায়।
ডাটা এন্ট্রি কিভাবে শিখবেন
Data Entry কাজ করা যেমন সহজ তেমনি এর কাজ শিখাও অনেক সহজ। ১ মাস ভালোমতো সময় দিলে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ডাটা এন্ট্রির কাজ শেখা সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনি ইউটিউব এর বিভিন্ন ফ্রী কোর্স এর মাধ্যমেই এই প্রায় সব কাজ শিখতে পারবেন। ফ্রিতে শিখা শেষ হলে কোনো ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করে Data Entry নিয়ে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
তাছাড়া ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকার কোর্স Udemy ও Skillsahre পাওয়া যায়। সেখান থেকে কোর্স করেও আপনি ডেটা এন্ট্রির কাজ শিখতে পারবেন। অথবা অফলাইন কোন ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে ডাটা এন্টির কাজ শেখা শুরু করতে পারেন।
ডাটা এন্ট্রি (Data Entry) করে ইনকাম করার উপায়
ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে তো অনেক কিছুই জানা হল হল। কিন্তু ইনকাম করব কিভাবে? ডাটা এন্ট্রি করে বিভিন্নভাবে ইনকাম করা সম্ভব, তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে রিমোট জব, অথবা ফুল টাইম জব এই দুটির যেকোনো একটি করে আপনি ডেটা এন্ট্রির কাজ শুরু করতে পারেন।
১। রিমোট জব
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমনঃ Upwork, Fiverr ইত্যাদিতে Data Entry কাজে অনেক চাহিদা রয়েছে। আপনি চাইলে ঘরে বসেই এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারেন। তবে এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি আপনার প্রোফাইলটিকে ভালোভাবে সাজিয়ে তুলতে হবে।
২। ফুলটাইম চাকরি
বর্তমানে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের চাহিদা অনেক বেশি। আর এই চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আপনি চাইলে ফুল টাইম চাকরি করে Data Entry এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। তবে ফুল টাইম চাকরির ক্ষেত্রে দক্ষতার পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতারও প্রয়োজন হয়।
ডাটা এন্ট্রি করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?
বর্তমান সময়ে ডাটা এন্ট্রি এক্সপার্টদের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। লোকাল জবের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে Data Entry এক্সপার্টদের ভালো ডিমান্ড রয়েছে। Indeed এর তথ্য মতে একজন প্রফেশনাল ডাটা এন্ট্রি এক্সপাট প্রতিমাসে $1,832 থেকে $4,173 আয় করে থাকে। এবং প্রতিবছর গড়ে $39,048 আয় করে থাকেন। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে অন্যান্য জবের মত ডাটা এন্ট্রির কাজেরও ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমার মতে যারা কম্পিউটারের ব্যবহারে ভালো দক্ষতা রয়েছে তাদের উচিত Data Entry কাজের মাধ্যমে তাদেরকে ক্যারিয়ার শুরু করা।
আমাদের শেষ কথা
এই কাজটি খুব সহজ হলেও একে অবহেলা কোনো সুযোগ নেই কারণ দিন দিন এই কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে। আপনি ফুল টাইম হিসেবে ডাটা এন্ট্রির কাজ না করলেও, চাইলে ফুল টাইম চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং Data Entry করে সহজেই মাসে ২০ হাজারের বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আশা করি, Data Entry কি? এবং Data Entry করে ইনকাম করার সমস্ত বিষয়গুলো আপনারা ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। তারপরও আপনাদের কোনো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনাদের কমেন্টের অপেক্ষায় থাকবো।
Most Common FAQ’s About Data Entry
আপনাদের করা ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কিত বহুল আলোচিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিম্ন তুলে ধরা হলোঃ
১। ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য কি কি জানা দরকার?
উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য কম্পিউটারের উপর ভালো স্কিল থাকা অত্যাবশ্যকীয়। এক্ষেত্রে মাইক্রোসফটের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন গুলোর পাশাপাশি কম্পিউটারে বেসিক কিছু ডিভাইস সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে।
২। ডাটা এন্ট্রি কাজ করে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?
উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রি কাজ করে মাসে আপনি কত টাকা ইনকাম করবেন তা নির্ভর করে প্রতিদিন আপনি কত ঘন্টা কাজ করবেন তার উপর। তবে গড়ে একজন ফ্রিল্যান্সার Data Entry করে মাসে $500 থেকে $1500 পর্যন্ত আয় করতে পারে।
৩। ফ্রিল্যান্সিং ডাটা এন্ট্রি কিভাবে শুরু করব?
উত্তরঃ মাইক্রোসফট এক্সেল, ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এবং এগুলোর সাথে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য এপ্লিকেশনের উপর দক্ষতা অর্জন করে Data Entry স্পেশালিস্ট হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
৪। মোবাইল ডাটা এন্ট্রি করা যাবে কি?
উত্তরঃ স্মার্টফোন দিয়েও এ ধরনের কাজ করা সম্ভব। তবে মোবাইল নিয়ে করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় লাগবে।
৫। ডাটা এন্ট্রি শিখতে কত দিন লাগে?
উত্তরঃ ডাটা এন্ট্রি কাজে দক্ষ হতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি অনেক দ্রুত ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখতে পারবেন।
✨কোন IT স্কিল জানা নেই, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কেও কোনো অভিজ্ঞতা নাই। আবার শুধু চাকরি করে ভালো টাকা আয় করতে পারছেন না। যদি আপনিও একটা ভালো লাইফস্টাইলের জন্য ও পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং করতে চান অথবা পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা ইনকাম করতে চান তাহলে এই কোর্সটি আপনার জন্য।
তাহলে দেরী কেন? আজই এনরোল করে শুরু করুন ঘরে বসে আয় করা!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.