পিপিসি কি?
পিপিসি শব্দটির অর্থ হলো পে পার ক্লিক,অর্থাৎ প্রতিটি ক্লিকের জন্য পে করা। অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের প্রচার বা প্রমোশনের যতগুলো মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে অ্যাডভার্টাইজিং বা বিজ্ঞাপন। আর এই অ্যাডভার্টাইজিং শব্দের সঙ্গে পিপিসি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পিপিসি হচ্ছে একটি ইন্টারনেট মার্কেটিং মডেল যেখানে অ্যাডভার্টাইজাররা তখনই পে করে যখন তাঁদের অ্যাডস এ ক্লিক পড়ে।
Table of Contents
এ ধরনের বিজ্ঞাপনের জন্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কিওয়ার্ড ভিত্তিক পিপিসি পছন্দ করার সুযোগ রয়েছে। কেননা বিভিন্ন ধরনের কিওয়ার্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিপিসি বা পে-পার-ক্লিকের খরচ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপনদাতাদের তখনই খরচ হবে যখন তার অ্যাড এ ক্লিক করবে অন্যথায় কোনো খরচ হবে না।
পিপিসি মার্কেটিং কি? (What is PPC Marketing?)
PPC হচ্ছে একটি ইন্টারনেট মার্কেটিং মডেল যেখানে অ্যাডভার্টাইজাররা টাকার বিনিময়ে সার্চ ইঞ্জিন গুলোর মাধ্যমে পছন্দের কিওয়ার্ড কে সার্চ রেজাল্ট এর প্রথম পাতায় নিয়ে আসে। আমরা সবাই চায় আমাদের পছন্দের কিওয়ার্ডে আমাদের ওয়েবসাইটটি সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকে থাকুক। আর এজন্য করতে হয় পেইড মার্কেটিং। আর এই পেইড মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার কিওয়ার্ডটি যদি হাই কম্পিটিশন হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে এখানেও প্রতিযোগিতা করতে হবে। এখানে আপনার পণ্যের যত বেশি কম্পিটিশন থাকবে বিজ্ঞাপনের দাম বা পিপিসি এর খরচ তত বেশি হবে। এক্ষেত্রে আপনার যদি কিওয়ার্ড রিসার্চ সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই লং টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করে পিপিসি এর খরচ সহজেই কমিয়ে আনতে পারবেন।
পিপিসি মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
পিপিসি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার গ্রাহকদের বয়স, লিঙ, রুচিবোধকে টার্গেট করে পেইড অ্যাড ক্যাম্পেইন চালু করা যায়। ফলে নির্দিষ্ট গ্রাহকরাই পণ্যের বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে এতে আপনি দুই দিক থেকে লাভবান হবেন। একদিক থেকে আপনি আপনার নির্দিষ্ট কাস্টমারদের পেয়ে যাচ্ছেন অন্য দিক থেকে বিজ্ঞাপনের অযথা পিপিসি ক্লিক এর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। পিপিসি শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রেই নয় এটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে মোটামুটি সব অ্যাড নেটওয়ার্কেই রয়েছে। মার্কেটপ্লেসে এসংক্রান্ত প্রচুর কাজ হয়েছে।
জনপ্রিয় পিপিসি অ্যাড নেটওয়ার্ক (PPC Ad Network)
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় পিপিসি অ্যাড নেটওয়ার্কগুলোর মাঝে অন্যতম হচ্ছে, Google Ads, Microsoft Ads, Facebook Ads, Instagram Ads, LinkedIn Ads, Twitter Ads, Pinterest Ads, Amazon Ads, Snapchat Ads, Quora Ads, Bidvertiser, RevContent, AdRoll, BuySellAds, AdRecover, AdBlade ইত্যাদি। পিপিসি অ্যাড নেটওয়ার্কগুলোর মাঝে সব চেয়ে জনপ্রিয় পিপিসি অ্যাড নেটওয়ার্ক হচ্ছে Google, Facebook, Microsoft Bing Ads. তবে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর মাঝে জনপ্রিয় পিপিসি অ্যাড নেটওয়ার্ক হচ্ছে ফেসবুক।
সফলভাবে পিপিসি ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য টিপস
আপনি যদি সফলভাবে একটি পিপিসি মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করাতে চান তাহলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে :
১। গোল সেট আপ করুন
একটি পিপিসি ক্যাম্পেইন সেটআপ করার আগে প্রথমেই আপনার গোলটি নির্ধারণ করতে হবে। আপনি এই ক্যাম্পেইন টির মাধ্যমে আসলে কী অর্জন করতে চাচ্ছেন, এটি পরিষ্কার করতে হবে। আপনি কি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ট্রাফিক আনতে চাচ্ছেন নাকি লিড জেনারেট করতে চাচ্ছেন নাকি সেলস আনতে চাচ্ছেন আপনার ক্যাম্পেইন শুরুর পূর্বে বিষয়টি সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
২। সঠিক কিওয়ার্ড বাছাই করুন
একটি সফল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই সঠিক কীওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। এজন্য আপনি চাইলে গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানার থেকে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারেন অথবা অন্য কোনো টুলস ব্যবহার করে সঠিকভাবে জনপ্রিয় কিওয়ার্ড খুঁজে নিতে হবে।
৩। নেগেটিভ কিওয়ার্ড বাদ দিন
একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার সময় আপনাকে যেমন সঠিক কিওয়ার্ডগুলো বাছাই করে নিতে হবে, একই সাথে যে কিওয়ার্ডগুলো আপনার ব্যবসা সম্পর্কিত নয় সেগুলো কে বাদ দিতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছতে পারবেন।
৪। আকর্ষণীয় এ্যাড কপি তৈরি করুন
আপনার এ্যাডটিতে যে টেক্সট থাকবে সেটি যেনো একদম স্পেসিফিক হয় এবং মানুষকে আকৃষ্ট করে। সেখানে এমন শব্দ বা কথা থাকতে হবে যাতে মানুষ আপনার এ্যাডে ক্লিক করে। সাধারণত মানুষ অফার সম্পর্কিত প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন গুলোতে বেশি ক্লিক করে।
৫। অ্যাড এক্সটেনশনের ব্যবহার করুন
পিপিসি ক্যাম্পেইন চালানোর সময় এদের পারফরম্যান্স বৃদ্ধির জন্য অ্যাড এক্সটেনশন ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে করুন আপনি একটি আলাদা ওয়েবপেজকে আপনার অ্যাডের সাথে লিংক করতে চান সেক্ষেত্রে সাইট লিঙ্ক এক্সটেনশন টি ব্যবহার করে এ কাজটি করতে পারবেন। আবার অনেক সময় অ্যাডটির ভেতরে ফোন নাম্বার যুক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে যেখানে ভিজিটররা খুব সহজেই ফোন নাম্বারের উপর ক্লিক করে কল করতে পারবে, এই কাজটি করার জন্য কল এক্সটেনশন টি ব্যবহার করা হয়। এভাবে বিভিন্ন ধরণের অ্যাড এক্সটেনশন ব্যবহার করে আপনি আপনার অ্যাডের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করতে পারেন।
৬। ফলাফল যাচাই-বাছাই করুন
পিপিসি ক্যাম্পেইন সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই প্রতিনিয়ত এর ফলাফল যাচাই-বাছাই করতে হবে। কারণ আপনি যদি আপনার ক্যাম্পেইনকে ট্র্যাক না করেন তাহলে লসের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য সফলভাবে একটি পিপিসি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার জন্য অবশ্যই এর ফলাফল পর্যালোচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
পিপিসি মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
আপনার যদি একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে তাহলে পিপিসি মার্কেটিং করে দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য বিক্রি করতে পারেন। পিপিসি মার্কেটিং করে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো পরিমাণের টাকা আয় করা সম্ভব।
উপরের জবের স্ক্রিনশটটি আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস থেকে নেওয়া। এখানে একটি কোম্পানি যারা মাসে ৩০ হাজার ডলারের উপরে বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ করে গুগলে অ্যাড দিয়ে। তারা সেই খরচকে ১ লক্ষ ডলারে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তারা তাদের বিজ্ঞাপনটিকে একজন পিপিসি এক্সপার্ট এর মাধ্যকে অপটিমাইজ করতে চায়, যেনো তারা আরও বেশি কাস্টমার খুঁজে পায়। এজন্য তারা ঘন্টায় ২৫ – ৬০ ডলার পর্যন্ত একজন পিপিসি এক্সপার্ট কে পেমেন্ট দিতে প্রস্তুত। মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ ধরনের অনেক দীর্ঘ মেয়াদী কাজ রয়েছে দক্ষ পিপিসি এক্সপার্টদের জন্য। তাই আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে শুধুমাত্র পিপিসি নিয়ে কাজ করেন তাহলেও অনেক কাজ করতে পারবেন।
তবে এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে, আপনি যখন কোনো কোম্পানির জন্য পিপিসি এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করবেন তখন কোনো হারাম পণ্যের প্রমোশনে তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারবেন না। এজন্য মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টের কাজ নেওয়ার সময় প্রথমে জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে তার ব্যবসার ধরন সম্পর্কে।
কীভাবে শিখব পিপিসি এর কাজ?
অনেকেই পিপিসি মার্কেটিং শিখে মার্কেটপ্লেসে সফলতার সাথে কাজ করছে। আপনি যদি পিপিসি নিয়ে কাজ শিখতে চান তাহলে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১। অনলাইন কোর্স
পিপিসি মার্কেটিং সংক্রান্ত অনলাইনে অনেক কোর্স হয়েছে যেখানে একেবারে বেসিক বিষয়গুলোতে থেকে শুরু করে এডভান্স পিপিসি অ্যাডভার্টাইজিং নিয়ে কাজ শেখানো হয়। এসব কোর্সে সাধারনত অ্যাড অ্যাকাউন্ট সেটআপ, অ্যাড এর ফরম্যাট, সঠিকভাবে টার্গেটিং, পিপিসি বিড স্ট্রাট্যাজি, বিভিন্ন ধরনের ট্রাকিং এবং এর ফলাফল পর্যালোচনা শেখানো হয়। অনলাইন কোর্সের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনার যদি ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকে তাহলে Udemy, Skillshare, Coursera এর মত সাইটগুলো থেকে কাজ শিখতে পারেন। বাংলাদেশ ও বিভিন্ন ধরনের আইটি ইন্সটিটিউট রয়েছে যারা অনলাইন কোর্স করিয়ে থাকে এসব বিষয়ের উপর। আমি ব্যক্তিগতভাবে সুন্নাহ আইটি ইনস্টিটিউট এর সাথে যুক্ত, এখানে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ শেখানো হয়।
২। বই পুস্তক
যেকোনো বিষয় নিয়ে কাজ শেখার জন্য অবশ্যই বই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। পিপিসি নিয়ে বাজারে অনেক ধরনের বই রয়েছে। আপনার যদি সুযোগ থাকে এসব বই পড়েও কাজগুলো শিখে নিতে পারেন। আপনার যদি ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকে তাহলে আমি তিনটি বই পড়ার জন্য সাজেশন দিব, “Pay Per Click Search Engine Marketing: An Hour a Day” by David Szetela and Joseph Kerschbaum “The Complete Guide to Google Ads” by Brad Geddes “Paid Advertising: Mastering the Basics” by Richard Fallah
৩। ব্লগ এবং ওয়েব সাইট
পিপিসি নিয়ে অনেক ব্লগ এবং ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে নিয়মিতভাবে টিপিসি এডভার্টাইজিং এর বিভিন্ন টিপস এবং ট্রিকস শেয়ার করা হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের কেস স্টাডি পাবলিশ করা হয় যা অনেক কিছু জানতে সাহায্য করে। পিপিসি নিয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি ব্লগের মধ্যে অন্যতম পাঁচটি ব্লগের নাম এবং ওয়েবসাইট লিংক নিচে দেওয়া হল:
নাম | ওয়েবসাইট লিংক |
Search Engine Land | searchengineland.com |
Wordstream | wordstream.com/blog |
PPC Hero | ppchero.com |
AdEspresso | adespresso.com/blog |
Unbounce | unbounce.com/blog |
৪। বাস্তব অভিজ্ঞতা
পিপিসি নিয়ে আপনি অনেক কিছু জানলেও যদি সেটি বাস্তব প্রয়োগ না করা হয় তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না। তাই কাজ শেখার পাশাপাশি তা বাস্তব প্রয়োগের প্রয়োজন আছে। পিপিসি প্ল্যাটফর্ম গুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে এগুলোর বিভিন্ন ধরনের এড ফরমেট ক্যাম্পেইন সেটআপ ইত্যাদি কাজগুলো নিজে নিজে করার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিনিয়ত ভালো ফলাফলের জন্য সঠিকভাবে ক্যাম্পেইন অপটিমাইজ করা শিখতে হবে।
শেষ কথাঃ
ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে আপনি যদি নিজে পিপিসি মার্কেটিং এর কাজগুলো না করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে, ভাল কোনো এজেন্সির সাথে ইন্টারশীপ অফারে কাজ করা অথবা পরিচিত বন্ধু-বান্ধব বা কোন বড় ভাইয়ের কাছে থেকে কাজগুলো শিখে নেওয়া। এতে করে আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন হবে এ বিষয়ে। তবে কারো কাছে কাজ শেখার সময় চেষ্টা করতে হবে দ্বীনি বুঝ রয়েছে এমন মানুষের সাহচর্যে কাজ শেখার। এবং কোনো প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশীপ নিয়ে কাজ শিখতে গেলেও চেষ্টা করতে হবে যারা হালাল হারাম বেছে কাজ করে তাদের কাছে কাজ শেখার। তা না হলে আপনি হারাম কাজগুলোর মধ্যে জড়িয়ে যেতে পারেন। কারণ পরিবেশ মানুষকে অনেক প্রভাবিত করে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.