বর্তমানে কমবেশি সবারই মনের একটি ইচ্ছা থাকে,ইস! আমি যদি ঘরে বসে থাকতাম আর আমার অ্যাকাউন্টে ডলার বা টাকা ঢুকতো, চোখ বুজে লাইফটা কাটিয়ে দিতাম। এই যে বসে থেকে নিয়মিত টাকা ইনকাম করার প্রক্রিয়া বা আমি কোন একটি কাজ একবার করে বাসায় বসে থাকব এবং ওই কাজ থেকে আমার একাউন্টে টাকা ঢুকতে থাকবে একে প্যাসিভ ইনকাম বলে। এবং বর্তমান সময়ে প্যাসিভ ইনকাম এর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস।
Table of Contents
প্রিন্ট অন ডিমান্ড কি?
বর্তমান সময়ে ঘরে বসে ইনকাম করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম প্রিন্ট অন ডিমান্ড। এক্ষেত্রে ডিজাইনাররা মার্কেটপ্লেসে তাদের ডিজাইন কৃত পণ্যের ডিজাইন দিয়ে থাকে, সেখান থেকে বায়াররা পণ্যটি কিনলে ডিজাইনাররা একটি নির্দিষ্ট কমিশন পায়। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে ক্লায়েন্টের কাছে পণ্যটি পৌঁছাবে কিভাবে বা ক্লায়েন্ট পণ্যটি পাবে কিভাবে। চিন্তার কোন কারণ নেই কোন প্রকারের হ্যাসেল আপনাকে পোহাতে হবে না, উক্ত পণ্যটি তৈরি এবং ক্লায়েন্টের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব ঐ মার্কেটপ্লেস নিয়ে নেবে। ফলে আপনি শুধু ডিজাইন আপলোড করে ঘরে বসে থাকবেন বাকি সব দায় দায়িত্ব ওই মার্কেট প্লেসের।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড কিভাবে শুরু করব?
যেকোনো কাজে বা ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে চাইলে প্রথমে আমাদের একটি রোড ম্যাপ তৈরি করতে হবে। যা আমরা অনুসরণ করে আমাদের কম্পিটেটরদের থেকে এগিয়ে যাব ও আমাদের কাজে বা ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
১.নিশ সিলেকশন
যেকোনো ব্যবসা শুরু করার আগে, শুরুতেই আমাদের ওই ব্যবসা সম্পর্কে রিসার্চ করতে হয়। প্রথমেই আপনাকে রিসার্চ করতে হবে আপনি কোন নিস বা কোন প্রোডাক্ট এর কাজ করবেন। আপনি সেই প্রোডাক্টগুলোকে টার্গেট করতে পারেন যা মার্কেটে বেশ চলছে বা গ্রাহকরা কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে।
অনেকেই মার্কেট রিসার্চ না করে ইচ্ছে মতো নিশ সিলেক্ট করে কাজে নেমে পড়ে, ফলাফল স্বরূপ তার ব্যবসা বা প্রোডাক্ট থেকে আশানুরপ সেল জেনারেট হয় না। নিচে কিছু প্রচলিত প্রোডাক্টের নাম দেওয়া হলঃ
- টি শার্ট
- হুডি
- মগ
- তোয়ালে
- ফোন কভার
- নোটবুক
- স্টিকার
- ব্যাগ
- স্টেশনারি ইত্যাদি
২.প্রোডাক্ট রিসার্চ
নিস সিলেক্ট করার পর আমাদের পরবর্তী কাজ থাকবে ওই নিশের উপর ভিত্তি করে প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা। প্রোডাক্ট সিলেক্ট করার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম মার্কেটপ্লেস রিসার্চ করতে হবে। নিচে কয়েকটি মার্কেটপ্লেসের তালিকা দেয়া হলঃ
- Printful.
- Amazon Merch on Demand
- Zazzle.
- Printify.
- Redbubble.
- Fine Art America.
- TeeSpring.
- Society6.
- Sunfrog
- Threadless
- Teefury
৩. ওয়েবসাইটে সেল হওয়া টপ ডিজাইন গুলো দেখা
প্রোডাক্ট সিলেক্ট করার পর আপনাকে মার্কেটপ্লেস গুলোতে গিয়ে সেই প্রোডাক্ট রিলেটেড যে ডিজাইনগুলো বেশি চলছে সেগুলো লক্ষ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সারদেরও ফলো করতে পারেন। আপনি ডিজাইনসমূহ দেখে শেখার ও বোঝার চেষ্টা করবেন কখন কোন ডিজাইন মার্কেটে বেশি চলে, আশা করা যায় খুব দ্রুত আপনি সফলতা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
৪.ডিজাইন তৈরি করা
মনে করুন আপনি টপ সেলিং প্রোডাক্টের ডিজাইন গুলো দেখে ফেলেছেন এখন আপনি আপনার ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগিয়ে ডিজাইন তৈরি করুন। ডিজাইন তৈরি করার সময় মাথায় রাখবেন আপনার ডিজাইনগুলো যেন ইউনিক হয়। প্রতিদিন যত বেশি পারেন ডিজাইন তৈরি করে মার্কেটপ্লেসে আপলোড করুন।
আপনি ডিজাইন তৈরি করার সময় ফটোশপ বা ইলাস্ট্রেটরের মত টুলস ব্যবহার করবেন এবং এই টুলস সমূহের প্রপার ইউজ করতে পারলে আপনি খুব দ্রুতই প্রফেশনাল ডিজাইন তৈরি করা শিখে যাবেন।
৫.ডিজাইনগুলোর মার্কেটিং করা
মার্কেটিং বলতে সাধারণত আমরা বুঝে থাকি পণ্যের ব্র্যান্ডিং বা এডভারটাইজমেন্ট করে সাধারণ জনগণের কাছে প্রচার প্রচারণা চালানো। আপনি যদি শুধু ডিজাইন তৈরি করে মার্কেটপ্লেসে আপলোড করেন, তাহলে আপনি খুব একটা দ্রুত প্রফিট জেনারেট করতে পারবেন না। আপনাকে ডিজাইন তৈরির পাশাপাশি সেই ডিজাইনগুলোকে মার্কেটিং করার সিস্টেমও জানতে হবে। আপনি দুইভাবে আপনার ডিজাইন গুলোকে মার্কেটিং করতে পারেন যথাক্রমে ফ্রি মার্কেটিং ও পেইড মার্কেটিং। আপনার যদি মার্কেটিং করার মত বাজেট না থাকে, তাহলে আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার ডিজাইনগুলোকে আপলোড দিয়ে মার্কেটিং করতে পারেন। পেইড মার্কেটিং এর জন্য আপনি ফেসবুকে এড রান করাতে পারেন বা এসিওর পেছনে অর্থ ব্যয় করতে পারেন।
৬.ট্রেন্ডি টপিকের ওপর ডিজাইন তৈরি করাঃ
সব সময়ই মার্কেটে ট্রেন্ডি টপিকের উপর সেল বেশি থাকে, বর্তমানে প্রায় সবাই ট্রেন্ড ফলো করে তাই আপনারও উচিত মার্কেটের ট্রেন্ডি বিষয় গুলোর উপর রিসার্চ করে ইউনিক ডিজাইন তৈরি করা।
৭.রিসার্চের জন্য টুলের ব্যবহার
আমরা মার্কেট রিসার্চ করার জন্য বিভিন্ন টুল ব্যবহার করতে পারি। ব্যবসায়িক রিসার্চ করার জন্য আপনি কিওয়ার্ড সারফার বা কীওয়ার্ড এভরি-হয়ার এর মত টুলস ব্যবহার করতে পারেন। টুলস থেকে প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী আপনি পেইড মার্কেটিং করতে পারেন। যা আপনার সেলসকে কয়েক গুণে বৃদ্ধি করতে পারে।
প্রিন্ট অন ডিমান্ড দিয়ে কি প্যাসিভ ইনকাম সম্ভব
অবশ্যই, প্রিন্ট অন ডিমান্ড এর মাধ্যমে বৃহৎ আকারের প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব। মনে করুন আপনি কোন মার্কেটপ্লেসে দৈনিক দুটো করে ইউনিক ডিজাইন আপলোড দেন এক বছর পর আপনার ডিজাইনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৩০ টি এভাবে চলতে থাকলে পাঁচ বছর পরে আপনার ডিজাইনের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮২৫ টি। আপনার এতগুলো ডিজাইন থেকে গড়ে যদি মাসে ২০০ টি ডিজাইন ও সেল হয় আপনার কি পরিমান ইনকাম জেনারেট হবে বুঝতেই পারছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আপনি যদি নতুন করে ডিজাইন আপলোড দেওয়া বন্ধও করে দেন তবুও কিন্তু আপনার ইনকাম হতেই থাকবে।
পরিশেষে
বর্তমানে পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রিন্ট অন ডিমান্ড প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে প্রিন্ট অন ডিমান্ডের চাহিদা কেমন। এর চাহিদা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ এর কম্পিটিশন, তাই আপনি যদি ভেবে থাকেন প্রিন্ট অন ডিমান্ড ভিত্তিক আপনার ক্যারিয়ার গঠন করবেন তাহলে আপনি এখনই প্রিন্ট অন ডিমান্ড শেখা শুরু করতে পারেন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.