ফ্রিল্যান্সিং করার প্রথম ধাপ কী? কিভাবে শুরু করব? কোন বিষয়টা আগে শিখব?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ধাপ সমূহ

যারা একদমই নতুন এবং জানেনই না যে ফ্রিল্যান্সিং কি তাদের জন্য খুব সহজ করে যদি বলি ফ্রিল্যান্সিং শব্দের অর্থ হচ্ছে মুক্ত পেশা। যেখানে আপনি আপনার ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারবেন আপনার পচ্ছন্দের পেশায়। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থায়ী ভাবে কাজ না করে মুক্ত ভাবে বাধাহীনভাবে কাজ করার নামই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। সচরাচর  চাকরির মত এখানে সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে অফিস টাইমের ধরাবাধা কোনো নিয়ম নেই। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আপনি বাসায় বসেই নিজের মতো করে কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া, আপনার যদি কাজ করতে ভালো না লাগে ইচ্ছে মত ছুটি কাটাতেও পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং এ অনেক সুযোগ সুবিধা থাকার জন্য অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছে। সুনির্দষ্ট নিয়ম কানুন না জানার কারনে অনেকেই এ পেশাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে আপানি যদি প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপ অনুসরন করেন তাহলে আপনিও পারবেন সাফ্যেলর চূড়ায় আরোহণ করতে।

ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করার ধাপ সমূহ

ভালোভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়ে তোলতে চাইলে আপনাকে কিছু বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিতে। তা নাহলে আপনার Freelancing ক্যারিয়ার শুরু করার আগে মুখ থুবড়ে পরবে। আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করার জন্য কিছু গরুত্বপূর্ন ধাপ নিচে তুলে ধরছি।

১। পর্যাপ্ত সময়ের ব্যবস্থা রাখা

বর্তমানে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আগ্রহী হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, কাজ শেখার জন্য আপনার পর্যাপ্ত সময় আছে কিনা। অনেকেই নিজের ব্যস্ত সিডিউল এর মধ্যেও কাজ শেখার বা ফ্রিল্যান্সিং করার ইচ্ছা পোষণ করেন। প্রথমদিকে ১-২ দিন প্র্যাকটিস করার পর পরবর্তীতে আর ব্যস্ততার কারণে কন্টিনিউ করা হয়ে উঠে না।  এজন্য প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, কাজ শেখার জন্য আপনার পর্যাপ্ত সময় আছে। 

২। কাজ শিখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা

যেকোনো নতুন বিষয় শেখার জন্য ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন। একটি কঠিন বিষয়ও ধারাবাহিকভাবে শিখলে তা একসময় সহজ মনে হয়। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য প্রতিদিন একটি রুটিন তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ শিখতে হবে। এবং সবসময়য় নিজেকে কাজ শিখার উপরেই রাখতে হবে, এতে করে মার্কেটপ্লেসে আপনার চাহিদা অন্যদের থেকে বেশি থাকবে।

৩। ধৈর্য সহকারে কাজ শেখা

কাজ শেখার এই সময়টাতে আপনাকে প্রচুর Struggle করতে হবে নতুন বিষয়গুলোকে আয়ত্তে আনার জন্য। এজন্য আপনাকে ধৈর্য সহকারে কাজ শেখার পেছনে লেগে থাকতে হবে। প্রাথমিক অবস্থায় আপনার কোনো ইনকাম হবে না এটি ধরে নিয়েই আগাতে হবে; যদি খুব দ্রুত ইনকামের আশা নিয়ে এ সেক্টরে আসেন তাহলে হতাশ হতে পারেন। শুরুতে শুধুমাত্র কাজ শেখার উদ্দেশ্যেই অগ্রসর হতে হবে, তবে যদি কাজ শেখা অবস্থায় টুকটাক ইনকাম হয় এটি অবশ্যই আপনার জন্য বোনাস স্বরূপ।  অনেকে প্রলোভন দেখায়, কাজ শেখা অবস্থায় ইনকাম করছে এসব ভিডিও দেখে নিজের মাথাকে নষ্ট করবেন না। আপনি যেহেতু ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়ার জন্য চিন্তা করছেন সেজন্য সময় নিয়ে ভালোভাবে কাজ শিখতে হবে।  

৪। কাজ সম্পকিত ব্লগ পড়া ও ভিডিও দেখা

কাজ শেখার জন্য ইউটিউবে ভিডিও দেখতে হবে এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্লগ পড়তে হবে। ভিডিও দেখার সময় শুরুতে কার ভিডিও দেখব? কোন ভিডিও দেখব?  ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ কাজ করে। আপনাকে চেষ্টা করতে হবে কোন একটি চ্যানেলের নির্দিষ্ট টপিকের প্লেলিস্ট ধরে সবগুলো ভিডিও দেখার।  কোন চ্যানেল নির্দিষ্ট করে আগানোর প্রয়োজন নেই আপনি টপিক নির্দিষ্ট করে কাজ শেখার জন্য ভিডিওগুলো দেখবেন। আশা করি কি টপিক নিয়ে কাজ শিখতে হবে সে বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন ইতোমধ্যে এই বইটি পড়ে।

৫।সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত গ্রুপে যুক্ত হওয়া

আপনি যে বিষয়টি নিয়ে কাজ শিখছেন এবার এই বিষয় নিয়ে যারা অলরেডি কাজ করছে তাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন। এজন্য কার্যকরী উপায় হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপ বা পেইজে একটিভ হওয়া। মনে করুন আপনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শিখতে চাচ্ছেন, এবার এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে হোন। সেখানে প্রফেশনাল দের বিভিন্ন পোস্ট ফলো করুন এবং অন্যরা কিভাবে কাজ করছে সেগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। এই সময়টাতে চেষ্টা করবেন ফেসবুকে প্রোডাক্টিভ থাকার; অযথা বন্ধুবান্ধবদের সাথে চ্যাটিং করে সময় নষ্ট করবেন না। যে বিষয় নিয়ে কাজ শিখবেন সেগুলো সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে মতামত পাবেন। যা আপনাকে অনেক সাহায্য করবে। 

৬। অভিজ্ঞ মেন্টরের কাছে পরামর্শ নেওয়া

অনেকে শুধুমাত্র ইউটিউবে ভিডিও দেখেই কাজ শিখতে পারে, আবার অনেকে ভিডিও দেখে ঠিকভাবে কাজ শিখতে পারেনা কারণ ভিডিওতে কাজ সংক্রান্ত বিষয়ে খুটিনাটি প্রশ্নগুলো করা যায় না। এজন্য আপনার একজন মেন্টর প্রয়োজন হতে পারে। মেন্টর নির্বাচনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন আপনি যার কাছ থেকে কাজ শিখতে চাচ্ছেন  তার নিজের ফ্রিল্যান্সিং অভিজ্ঞতা আছে কিনা এবং কর্ম ক্ষেত্রে তিনি হালাল-হারামের বাছ বিচার করে চলেন কিনা। কারণ যেনো তেনো ভাবে ইনকাম করা আপনার জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত হবে না। 

৭। সঠিকভাবে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করা

কাজ ভালোভাবে শিখে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ একাউন্ট তৈরি করবেন। মার্কেটপ্লেসে একাউন্টের নাম, ব্যাংক একাউন্ট, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইলের নাম একই রাখার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে যেভাবে নাম লিখা আছে সেভাবেই ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হতে পারে। শুধুমাত্র একটি মার্কেটপ্লেস এর উপর নির্ভর না করে শুরুতে সবগুলো মার্কেটপ্লেসেই কাজ পাওয়ার জন্য সমান ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান। 

হালালভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করব কীভাবে?

আপনারা জানলে খুশি হবেন যে, ফ্রিল্যান্সিংএ কোন কাজ হারাম এবং কোন কাজ হালাল এ সম্পকিত আমাদের একটি বই ( হালাল ইনকামের খোঁজে ) প্রকাশ হয়েছে। Freelancing এর যে কাজগুলো হালালভাবে করা যায় তা এই বইটিতে সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং এর কাজগুলো কীভাবে করতে হয়, কি ধরনের কাজ মার্কেটপ্লেসে রয়েছে এবং কাজগুলো শেখার সঠিক উপায় ইত্যাদি। মনে রাখবেন অফলাইনে আমাদের জন্য যে কাজ করা হারাম তা অনলাইনে করাও হারাম।

হাতে কলমে ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

তাছাড়া, হাতে কলমে একজন মেন্টরের কাছে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শেখার জন্য ইনস্টিটিউটের খোঁজ করতে পারেন। বাংলাদেশের Freelancing শেখানোর জন্য অনেক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। কিন্তু হালালভাবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেয় এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব কমই রয়েছে বা নেই বললেই চলে।  প্রায় সব জায়গায় কাজ শেখানোটাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় কিন্তু সে কাজটি যে হালালভাবে হতে হবে এ বিষয়ে অনেকেরই ধারণা নেই বা গুরুত্ব নেই। আবার ইউটিউবে যদি ভিডিও দেখে কাজ শিখতে যান সেখানেও অনেক কম ইনস্ট্রাক্টর-ই পাবেন যারা আপনাকে হালালভাবে কাজগুলো করার ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।

শেষ কথা,

আমাদের জীবনে হালালভাবে উপার্জন করাটা অনেক জরুরি একটি বিষয়। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অনেক কাজ রয়েছে যেখানে হারাম ইনকাম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি একটু সতর্ক থাকেন এবং বিষয়গুলো জানেন তাহলে তা এড়ানো সম্ভব।  বিশেষ করে যখন আপনি কাজ শিখেন তখন যদি কেউ আপনাকে গাইড করে যে, এভাবে কাজ করলে বিষয়টি হারাম হবে আর এভাবে কাজ করলে বিষয়টি হালাল হবে তখন পরবর্তীতে হালালভাবে ইনকাম করাটা আপনার জন্য সহজ হবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছি মানুষকে সঠিকভাবে গাইড করার জন্য যেন সবাই আমরা হালালভাবে অনলাইন ক্যারিয়ার গড়তে পারি। এরই ধারাবাহিকতায় আমার প্রতিষ্ঠান সুন্নাহ আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শেখানো হচ্ছে। হালালভাবে Freelancing এর মাধ্যমে নিজের একটি অনলাইন ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আপনি সুন্নাহ আইটি ইনস্টিটিউট এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।  

এই ওয়েবসাইটের সকল কন্টেন্ট (ছবি, লেখা ইত্যাদি) অন্য কোথাও কপি করে বা পরিবর্তন করে পাবলিশ করার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ এমন অপরাধমূলক কাজ করেন তাহলে DMCA পাঠানো সহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।



Leave a Reply