কনটেন্ট মার্কেটিং হলো একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এর গরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা দারুণ এবং আকর্ষনীয় ভাবে ব্যবসার সার্ভিস বা প্রোডাক্ট গুলোকে প্রচার করে থাকে। কনটেন্ট মার্কেটিং এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো কনটেন্ট এর মাধ্যমে ক্রেতাদের আকর্ষিত করা এবং প্রডাক্ট বা সার্ভিস গুলোকে কেনার মনোযোগ সৃষ্টি করা।
Table of Contents
কনটেন্ট মার্কেটিং কি? ( What is content Marketing?)
কন্টেন্ট মার্কেটিং মূলত কন্টেন্টকে প্রকাশ করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য সমূহের উপকারিতা বা কোনো বিশেষ তথ্য যে মাধ্যমে তাদের টার্গেট কাস্টমারদের কাছে শেয়ার করে থাকে তাকে কন্টেন্ট মার্কেটিং বলে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে প্রমোশনের সময় কন্টেন্ট রাইটিং অবশ্যই লাগবেই। আপনি কাস্টমারদের ই-মেইল করবেন বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিবেন বা ব্লগে আর্টিকেল লিখবেন অবশ্যই সুন্দর একটি কন্টেন্টের প্রয়োজন হবে। মার্কেটিংয়ের কাজের সাথে যেহেতু কনটেন্ট বা লেখালেখি জড়িত এজন্য কনটেন্ট রাইটিংবিষয়টি ডিজিটাল মার্কেটিং এর সাথে সম্পর্কিত।
কনটেন্ট মার্কেটিং (content marketing) এর প্রকারভেদঃ
আমরা সচরাচর যে ধরনের কন্টেন্ট রাইটিং করি তা থেকে মার্কেটিংয়ের জন্য লেখাটা কিছুটা ব্যতিক্রম। এতে বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়, বিশেষ করে কনটেন্টই কোথায় ব্যবহার করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে লেখার ধরন পরিবর্তিত হয়। কনটেন্ট দিয়ে যদি কোনো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয় সেটি একরকমের কনটেন্ট হবে, আবার যদি কনটেন্টটি কোনো ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অন্যরকম হবে। এভাবে প্রয়োগভেদে ডিজিটাল কনটেন্ট কে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন –
- অডিও কনটেন্ট
- ভিডিও কনটেন্ট
- টেক্সট কনটেন্ট মাধ্যমে
- ইনফোগ্রাফিক কনটেন্ট
১) অডিও কনটেন্ট
ভয়েস বা শব্দের মাধ্যমে তৈরি অডিও কনটেন্ট দ্বারা আমরা প্রকাশ করে থাকি। এটি অনলাইন রেডিও এবং পডকাস্টে এর মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে থাকে। স্পষ্টভাষী এবং ভালো কন্ঠধারী হলে আপনি খুব সহজেই অডিও কনটেন্ট লিখতে পারেন এবং টাকা ইনকাম করতে পারেন। অডিও কনটেন্ট তৈরি করার জন্য আপনাকে সাধারণত স্ক্রিপ্ট প্রদান করা হয়। মহিলাদের কন্ঠে ও পর্দার কারণে অডিও কনটেন্ট কাজগুলি উচিত নয়। এই কারণে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে পুরুষদের সাথে বিশেষ পদ্ধতিতে কথা বলার শিক্ষা দেন।
২। ভিডিও কনটেন্ট
ভিডিওর মাধ্যমে তৈরিকৃত কোনো কনটেন্টকে ভিডিও কনটেন্ট বলা হয়। বর্তমানে ভিডিও কনটেন্ট ব্যাপক জনপ্রিয়। ভিডিও কনটেন্ট সহজেই আকর্ষণীয় এবং ব্যবসার জন্য কার্যকর। মোবাইলের মাধ্যমে কেউ সহজেই ভিডিও তৈরি করতে পারে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা প্রচার করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে কোম্পানির পণ্যের প্রচার ও প্রমোশনে ভিডিও কনটেন্ট ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের কাজ করার জন্য অবশ্যই আপনি যে কোম্পানির জন্য কাজ করছেন তার ব্যবসা হালাল হতে হবে এবং আপনার কনটেন্ট এর মধ্যে কোনো প্রকার অশ্লীলতা, নারীর দৃশ্য, বা মিউজিক ইত্যাদি থাকা যাবে না।
৩। টেক্সট কনটেন্ট
টেক্সট কনটেন্ট বলতে সাধারণ লেখার মাধ্যমে তৈরি করা কোনো কনটেন্টকে বোঝায় | এটি কনটেন্ট রাইটিং এর প্রাচীনতম একটি মাধ্যম, এজন্য টেক্সট কনটেন্টকে কখনো কখনো মৌলিক কনটেন্ট বলা হয় । আগে কনটেন্ট রাইটিং শুধু টেক্সট আকারে পাবলিশ করা হলেও কালের বিবর্তনে টেক্সট কনটেন্ট এর অনেক উন্নতি সাধন হয়েছে। এখন বিভিন্ন অনলাইন ব্লগ এবং ওয়েবসাইটে টেক্সট আকারে কনটেন্ট পাবলিশ করা হয়ে থাকে। এবং ব্যাপক সংখ্যক লোক প্রতিনিয়ত টেক্সট কনটেন্ট ভিজিট করে বা পরে ।
৪। ইনফোগ্রাফিক কনটেন্ট
কনটেন্ট রাইটিং এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ইনফোগ্রফিক কনটেন্ট। এ ধরনের কনটেন্ট ছবি ও লেখার মিলিত রূপ। বিভিন্ন ধরনের এডিটিং সফটওয়্যার ব্যাবহার করে এটি করা হয়। এ কাজটি করার জন্য ক্যানভা সফটওয়্যারটি অনেক জনপ্রিয়। মূলত গ্রাহক বা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্যই ইনফোগ্রাফিক কনটেন্ট তৈরি করা হয়। তথ্য ও চিত্রের সমন্বয়ে কোনো একটি বিষয়কে খুব সহজভাবে ভিজুয়ালি উপস্থাপন করার জন্য ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের কনটেন্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ারের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটাররা পণ্যের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে থাকে।
কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা ও সুবিধাসমূহ?
মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য এবং সেবার সুবিধাসমূহ প্রচার করতে পারে এবং ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মকাণ্ড সহজ করতে পারে, মার্কেট পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং আরও বেশি ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারে। কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের আরো বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। নিচে তা আলোচনা করা হলো:
১। কনটেন্ট মার্কেটিং সঠিক তথ্য দিয়ে ভিজিটরকে সহজে কাস্টমারে কনভার্ট করতে সাহায্য করে।
২। সঠিকভাবে কনটেন্ট মার্কেটিং করলে কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি পায়।
৩। কনটেন্ট মার্কেটিং গ্রাহকের আস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
৪। ভালো কনটেন্ট গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং ব্যবসা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫। ইনটারনেটে প্রকাশিত কনটেন্টের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কাস্টমার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬। কনটেন্ট মার্কেটিং এর জন্য অল্প বিনিয়োগ করতে হয় এবং সেটি সোশ্যাল মিডিয়াতে কার্যকর হতে পারে।
৭। কাস্টমাররা পণ্য কেনার আগে অনলাইনে বিস্তারিত তথ্য দেখে নেয়, তাই কনটেন্ট মার্কেটিং কাস্টমারকে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
৮। ভালো কনটেন্ট লিখলে অন্যদের মাঝে শেয়ার করা হয়, যা আপনাকে অটোমেটিক সেলস জেনারেট করতে সহায়তা করে।
কীভাবে কনটেন্ট মার্কেটিং শিখবো?
কনটেন্ট মার্কেটিং একটি সৃজনশীল কাজ। তাই খুব সহজে কোনো প্রকার পরিশ্রম না করে এটি শেখা সম্ভব নয়। মার্কেটিংয়ের কাজ গুলো করতে চাইলে প্রথমে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট এর সাথে পরিচিত হতে হবে। টেক্সট কনটেন্ট, অডিও কনটেন্ট , ভিডিও কনটেন্ট, ইনফোগ্রাফিক কনটেন্ট ইত্যাদি তৈরি করা জানতে হবে।
১। অন্যদের কনটেন্ট দেখুন
কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে হলে আপনার প্রচুর আইডিয়া লাগবে। আর এসব আইডিয়া তখনই আসবে যখন আপনি অন্যদের কনটেন্ট প্রতিনিয়ত দেখবেন। আপনি যখন অন্যের তৈরি করা কনটেন্ট দেখবেন তখন নিজে আইডিয়া তৈরি করতে পারবেন। কনটেন্ট দেখার পাশাপাশি বোঝার চেষ্টা করবেন, আপনি যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন সেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস অন্যরা কীভাবে সেল করছে। একই ব্যবসার সাথে জড়িত অন্যদের কনটেন্টগুলো দেখতে হবে এবং তা থেকে আইডিয়া নিতে হবে।
২। ছোট ছোট কন্টেন্ট তৈরি করুন
কনটেন্ট মার্কেটিং শেখার একেবারে শুরুর দিকে ছোট ছোট কনটেন্ট তৈরি করুন। এটি হতে পারে ছোট কোনো লেখা অথবা ভিডিও। শুরুতেই অনেক বেশি কোয়ালিটি সম্পন্ন বড় কনটেন্ট তৈরি করার চিন্তা মাথায় আনবেন না। তাহলে হয়তোবা আপনার শুরুটাই করা হবে না। এজন্য একেবারে শুরুর দিকে আপনি ফেসবুক এ ছোট ছোট লেখা মাধ্যমে কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন। এতে করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। যা পরবর্তীতে কনটেন্ট রাইটিংয়ের সময় কাজে লাগবে। আপনি টেক্সট বা ভিডিও যে ধরনের কনটেন্টই তৈরি করুন না কেন সেখানে অডিয়েন্সকে ধরে রাখতে হবে।
৩। নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি ও শেয়ার করুন
আপনি যত ভালো কনটেন্টই তৈরি করেন না কেন, তা যদি শেয়ার না করেন তাহলে এর কোনো মূল্য নেই। আবার শেয়ার করলেও যদি নিয়মিত না করেন বা অনিয়মিত ভাবে কনটেন্ট তৈরি করতে থাকেন তাহলেও সফলতা আসবে না। এজন্য নিয়মিতভাবে কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের কাজ গুলো শিখে যেতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে, পাশাপাশি শেয়ার করতে হবে।
৪। এনগেজিং কনটেন্ট তৈরি
আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রোফাইল তৈরি করলেন আর সবাই আপনাকে ফলো করবে এটি ভাবা বোকামি। এজন্য আপনাকে অবশ্যই প্রতিনিয়ত ভালো মানের কনটেন্ট দিতে হবে। কারণ মানুষ আপনাকে ফলো করবে আপনার কাজ দেখে। এক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে যখন কোনো কনটেন্ট তৈরি করবেন সেটি যেন অনেক বেশি এনগেজিং হয়। মানুষ যেনো সেখানে কমেন্ট করে, লাইক দেয় এবং শেয়ার করে। এক্ষেত্রে কনটেন্ট বিভিন্ন রকমের হতে পারে, সেটা ভিডিও হতে পারে, পোস্ট হতে পারে, ছবি হতে পারে।
কনটেন্ট মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ ও ফ্রীল্যান্সিং
কনটেন্ট মার্কেটিং এর ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এর উপর কোন নির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে কনটেন্ট রাইটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং কৌশল যা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং ভবিষ্যতেও এর চাহিদা বাড়তে থাকবে। এর মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কাস্টমারদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং আরও বেশি কাস্টমার আকর্ষণ করতে পারে। এছাড়াও কনটেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে ব্র্যান্ড এর প্রমোশন করা সহজ হয়ে যায়।

কনটেন্ট মার্কেটিং শিখলে আপনি কেবলমাত্র ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এই নয়, অনেক লোকাল কোম্পানিতেও চাকরি পাবেন। বর্তমানে অনলাইন বিক্রির জন্য সবগুলো প্রতিষ্ঠান কনটেন্ট মার্কেটার নিয়োগ দেয়। আর আপনি যদি চান, তাহলে ভবিষ্যতেও এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারবেন এবং কনটেন্ট রাইটিং শিখতে পারেন।
শেষ কথাঃ
এই ব্লগ পোস্টে আমরা দেখেছি কনটেন্ট মার্কেটিং কি এবং এর প্রয়োজনীয়তা এবং ভবিষ্যত। কনটেন্ট মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং স্ট্রাটেজি, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাস্টমারদের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং ব্র্যান্ড প্রমোশন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে কনটেন্ট মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয় এবং এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ভবিষ্যতেও এর প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়বে এবং এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাস্টমার আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই পর্যায়ক্রমে কনটেন্ট রাইটিং শেখার জন্য সময় ব্যয় করা উচিত।