বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুবই কম। বরং মানুষের অধিকাংশ সময় কাটে সোশ্যাল মিডিয়াতে, বিশেষ করে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে। এজন্য ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা রাখে। কোনো কিছু খুঁজে পেতেও সার্চ ইঞ্জিনের বদলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার হয়। মনে করুন আপনি একটি মোবাইল কিনতে চাচ্ছেন। এখন আপনি খুব সহজে ফেসবুকের সার্চ বারে মোবাইল লিখে সার্চ করে মার্কেটপ্লেস অপশন থেকে মোবাইল খুঁজে পারেন।
Table of Contents
এখনকার দিনে প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ড বা কোম্পানির নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল রয়েছে। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর পক্ষে হয়তো তার ব্যবসা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব নাও হতে পারে কিন্তু সে খুব সহজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পেজ তৈরি করে তার ব্যবসাকে প্রমোট করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালানোর এই কৌশলটিকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে।
ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক মার্কেটিং একটি যোগাযোগ মাধ্যম, যা ব্যবসায় পণ্য ও সেবার তথ্য ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দেয়। এর দ্বারা আপনি বেশি সংখ্যক গ্রাহকদের মধ্যে পণ্যের প্রচার করে পণ্য বিক্রির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারেন।ফেসবুক এক সময় শুধু সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে ফেসবুক একটি বড় ডিজিটাল মার্কেট প্লেস।
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে একটি পণ্য বা সেবা কে সবার মাঝে পৌঁছে দেয়া হয়। ফেসবুক মার্কেটিং ফ্রি এবং পেইড দুই ভাবেই হতে পারে। সঠিক নিয়মে ফেসবুক মার্কেটিং করতে চাইলে আপনার একটি সুন্দর ফেসবুক বিজনেস পেজ দরকার হবে।
ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার?
ফেসবুক মার্কেটিং প্রধাণত ২ প্রকারে হয়ে থাকে। আপনার ব্যবসায়র ধরন অনুযায়ী নিচের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। আপনার ব্যবসা তুলনামূলক নতুন হলে প্রথমে ফেসবুক পেইড মার্কেটিং করতে পারেন। পরে যখন আপনার ব্যবসার পরিধি বড় হবে তখন আপনি ফ্রী মার্কেটিং করে কাজ চালতে পারেন।
- ফেসবুক ফ্রি মার্কেটিং
- ফেসবুক পেইড মার্কেটিং
১। ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং
ফেসবুক ফ্রি মার্কেটিং হলো একটি সাময়িক বিপনন যোগাযোগ পদ্ধতি। এর অর্থ হলো ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য কোনো খরচ করার প্রয়োজন নেই। এর জন্য আপনাকে প্রথমে ১টি ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলতে হবে, এর পর সেখানে আপনার ব্যবসার পোস্ট, ছবি বা ভিডিও শেয়ার করে মানুষদের মাঝে প্রচার করার করতে হবে। সাধারনত ফ্রী ফেসবুক মার্কেটি ছোট ব্যবসার জন্য একটি উপযুক্ত এবং কার্যকর পদ্ধতি।
ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা
ফেসবুক ফ্রি মার্কেটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে নিচে একটি সংক্ষিপ্ত টেবিল তুলে ধরা হল-
সুবিধা | অসুবিধা |
---|---|
অর্গানিক টাফ্রিক আনা যায়। | লক্ষ্যমাত্রা সনাক্তকরণে সমস্যা হয়। |
সহজ ও সম্পূর্ন বিনামূল্যে। | ফলাফলের মান সঠিক নাও হতে পারে। |
বিভিন্ন পোস্ট ফরম্যাট ব্যবহার করা যায়। | সীমিত ট্র্যাকিং ও পরিসংখ্যানের সুবিধা। |
নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সুযোগ। | টার্গেটিং করে প্রচারনা চালানো যায় না। |
২। পেইড ফেসবুক মার্কেটিং
ফেসবুক পেইড মার্কেটিং হল বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ প্রদান করে ফেসবুকে আপনার সেবা বা পণ্য প্রচার করা। একটি পোস্ট বুস্ট করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট বয়স, অঞ্চল, লিঙ্গ টার্গেটেট অডিয়েন্সের কাছে নিজের বিজ্ঞাপন পৌঁছাতে পারবেন। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ফিডে আপনার বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত করে পণ্য বিক্রির হার বাড়াতে পারেন। ফেসবুক পেইড মার্কেটিং ব্যবসাগুলিকে বৃহত্তর শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে দেয় এবং তাদের আপনার ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা
নিম্নে ফেসবুক পেইড মার্কেটিং এর প্রধান সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হল।
সুবিধা | অসুবিধা |
---|---|
টার্গেটিং সুবিধা । | বিজ্ঞাপন খরচ বেশী । |
বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে নির্দিষ্টতা । | ক্লিক রেট ভালো না হলে টাকার অপচয় । |
অধিক সময় বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়। | অস্থায়ী ফলাফল । |
ট্র্যাকিং এবং পরিসংখ্যানের বিশেষ সুযোগ। | বিজ্ঞাপনের পারফর্ম্যান্স বিশ্লেষণে সময় অপচয় । |
ফেসবুক মার্কেটিং করার নিয়ম ও টিপস
ফেসবুক মার্কেটিং সফলভাবে করার জন্য ফেসবুক মার্কেটিং টিপস অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই টিপসগুলোর মাধ্যমে আমরা ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবো এবং আমাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়তে পারি।
- কোন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য মার্কেটিং করতে চাইলে অবশ্যই সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে একটি বিজনেস ফেসবুক পেজ তৈরি করতে হবে।
- বিজনেস পেজ টিতে আকর্ষণীয় প্রোফাইল পিকচার ও কভার ইমেজ দিতে হবে। ব্যবসার লোগো বা এমন ছবি সেট করতে হবে যা আপনার ক্রেতার কাছে আপনার ব্যবসাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করে।
- পেজের ডিসক্রিপশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে।
- পেইজের লাইক বা ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য নিয়মিত বন্ধুদেরকে ইনভাইট করতে হবে এবং সম্ভব হলে পেইড প্রমোশন চালাতে হবে।
- বিজনেস পেজ এ পর্যাপ্ত লাইক ফলোয়ার আসলে ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য ছবি বা ভিডিও শেয়ার করতে হবে। এ কাজটি নিয়মিত রুটিনমাফিক করতে হবে।
- বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেটিভ পোস্ট শেয়ার করতে হবে যেনো তা অন্যরা তাদের ওয়ালে শেয়ার করে। মাঝে মাঝে নিজের ব্যবসা সংক্রান্ত সার্ভিস গুলোকে প্রমোট করার জন্য পোস্ট করতে হবে।
- পেজের এংগেজমেন্ট বাড়াতে নিয়মিত কমেন্টের রিপ্লাই দিতে হবে এবং সম্ভব হলে যারা পোস্ট শেয়ার করবে তাদের পোস্টে গিয়ে কমেন্ট করতে হবে।
- পেইড মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে সিলেক্টিভ মানুষদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এজন্য সঠিকভাবে অডিয়েন্স টার্গেট করে পেইড মার্কেটিং করতে হবে।
- ভালো মানের কনটেন্ট তৈরি করতে হবে । কনটেন্ট হচ্ছে যেকোনো মার্কেটিংয়ের প্রাণ।
- পণ্য বা সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের গ্রুপে অর্গানিক ভাবে মার্কেটিং করতে হবে।
ফেসবুক মার্কেটিং করে ফ্রীল্যান্সিং ও আয় করার উপায়
বর্তমান সময়ে ফেসবুক মার্কেটিং করে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সারগন ফ্রিল্যান্সিং কাজ করছেন। আপনি যদি একজন প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং কাজের পাশাপাশি আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানকে মার্কেটিং এর মাধ্যমে পরিচিতি বাড়াতে পারেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি বারলে আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এর উপর নির্ভর হতে হবে না বরং আপনার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে আপনি কাজ পেতে পারেন।

শুধুমাত্র ফেসবুক মার্কেটিং সার্ভিস দিয়ে বাংলাদেশের অনেক ফ্রিল্যান্সার আপওয়ার্ক এবং ফাইবার থেকে হাজার হাজার বৈদেশিক মুদ্রা ইনকাম করছেন। আপনি চাইলে ফেসবুক মার্কেটিং দিয়ে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যান্য ক্যাটাগরি তুলনায় ফেসবুক মার্কেটিং তুলনামূলকভাবে সহজ হওয়ায় খুব দ্রুত আপনি কাজ শিখে ইনকাম করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
উপসংহারঃ
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার তুলনায় ফেসবুক এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ফেসবুক মার্কেটিং এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। ফেসবুক মার্কেটিং করে ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি আপনি আরো বিভিন্ন উপায়ে তথ্য উপার্জন করতে পারেন। আপনার যদি একটি ভালো মানের ফেসবুক বিজনেস পেজ থাকে তাহলে, অন্যের প্রোডাক্ট এফিলিয়েট করে, ব্র্যান্ড প্রমোশন করে, এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রমোশন করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।