অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট কিভাবে শুরু করব?

what is amazon affiliate marketing in bengali

যারা অনলাইনে আয় করার উপায় খুঁজছে বা ফ্রিল্যান্সিং করছে তারা অবশ্যই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শব্দটির সাথে অত্যন্ত পরিচিত। আপনার যদি একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে থাকে তাহলে আপনি খুবই অল্প পুঁজি ইনভেস্ট করে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার মাধ্যমে প্রতিমাসে ভালো এমাউন্টের টাকা প্যাসিভ ইনকাম করতে পারবেন। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের কতগুলো মাধ্যমের মধ্যে অন্যতম সেরা এবং সহজ মাধ্যম। একজনের প্রোডাক্ট অন্য আরেকজন মার্কেটিং করে বিক্রি করার মাধ্যমে, সেখান থেকে কিছু কমিশন গ্রহণ করাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রেফার করার মাধ্যমে  যতজন উক্ত পণ্যটি ক্রয় করবে তার একটি অ্যাফিলিয়েট কমিশন, এফিলিয়েট করা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাবে। মূল কথা হচ্ছে,যে কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করিয়ে দেওয়ার জন্য মার্কেটিং করে মার্কেটাররা যে কমিশন পেয়ে থাকেন,সেটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি

অ্যামাজন (Amazon.com) হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোর মাঝে একটি।এটিকে সবথেকে বড় ই-কমার্স প্লাটফর্ম বলেই জানে বেশিরভাগ মানুষ। Repricer Express এর তথ্যমতে, অ্যামাজনের প্রতি মিনিটের বাজার মুল্য প্রায় $283,000 মার্কিন ডলার। তাদের প্রোডাক্টের বিক্রি বাড়ানোর জন্য তারা অ্যামাজন এফিলিয়েট প্রোগ্রাম নামে বিশেষ একটি প্রোগ্রাম লাঞ্চ করে, যার মাধ্যমে যে কেউ তাদের প্রোডাক্টের  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করতে পারবেন। 

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম কি?

অ্যামাজন ওয়েব সাইটটিতে একটি প্রোগ্রাম রয়েছে,যার নাম ‘আফিলিয়েট প্রোগ্রাম’। অ্যামাজনের সাইটে যে প্রোডাক্টগুলো  রয়েছে,সেগুলোর বিক্রি বৃদ্ধির জন্য তারা এই সুবিধাটির ব্যবস্থা করে থাকে। বিশ্বের মধ্যে যে কেউ প্রোগ্রামটিতে অংশ নিয়ে পন্যের বিক্রি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এবং বিক্রি হওয়া পণ্য অনুযায়ী অ্যামাজন থেকে কমিশন পাবে। কমিশনের পরিমাণ পণ্যের ক্যাটাগরি ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মূলত অ্যামাজন সাইট জনপ্রিয় কারণ এখানে A to Z সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে অনেক পণ্যের মধ্যে ইচ্ছে অনুযায়ী পন্য বিক্রি করে উপার্জন করা যায়।

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তার

অ্যামাজনের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হচ্ছে,এটি একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড। এখানে প্রোডাক্টের কোয়ালিটি নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায়নি বললেই চলে এবং প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা  খুবই কম। তাদের কাস্টমার সাপোর্ট এবং স্বল্প সময়ে ডেলিভারি সিস্টেম সত্যিই অসাধারণ। অ্যামাজনে নিত্য প্রয়োজনীয় সব রকম জিনিস একসাথে পাওয়া যায় ফলে সাইটে  ভিজিটর এবং কাস্টমারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

অ্যামাজন মার্কেটিং করার কয়েকটি সহজ ধাপ

  • মার্কেটার যারা আছেন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে চায় তারা প্রথমে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট তৈরি করবে।
  • ওয়েবসাইটের প্রতিটি মালিক কে সেখানে ইউনিক অ্যাসোসিয়েট আইডি প্রদান করা হয়।
  • অ্যাফিলিয়েট লিংক তৈরী করা যাবে অ্যামাজন পোর্টাল থেকে,যখন অ্যাসোসিয়েট হবার অ্যাপ্লিকেশন অ্যাপ্রুভ করা হবে।
  • তারপর অ্যাসোসিয়েটগণ নিজেদের ওয়েবসাইটে অ্যামাজনের প্রোডাক্ট এর এফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামের শর্ত

ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন কিংবা নিজের ব্র্যান্ডের জন্য উপার্জন করতে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রয়োজনে আসতে পারে। অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েট হওয়ার জন্য অ্যামাজন প্রদত্ত কিছু শর্তাবলী প্রযোজ্য সেগুলো হলোঃ 

  •  নিজের ওয়েবসাইট থেকে পণ্য বিক্রয় করা যেতে পারে তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
  • পন্যের প্রচারের জন্য কোন মিথ্যা দাবি বা প্রচারণা চালানো যাবে না।
  • যেহেতু পণ্যের দাম পরিবর্তনশীল সেহেতু পন্যের দাম উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অবশ্য অফার বা ডিসকাউন্ট এর ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য উল্লেখ্য রাখা যেতে পারে।
  • ই-বুক বা ইমেইলে অ্যামাজন আফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যাবহার করা যাবে না। 

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট কমিশন রেট

অ্যামাজনে একেক ধরনের প্রোডাক্টে একেক ধরনের কমিশন রেট থাকে। কোন কোন প্রোডাক্টে কমিশন রেটের হার বেশি থাকে আবার কোন কোন প্রোডাক্টে কম। ধরুন আপনি কোন প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেছেন প্রোডাক্টটির বাজার মূল্য ২০০ ডলার  এবং প্রোডাক্টে আপনার কমিশন রেট ৫%। এখন কেউ যদি আপনার এফিলিয়েট লিংক থেকে ঐ প্রডাক্টটি  ক্রয় করে তাহলে আপনি ৫ পার্সেন্ট হারে কমিশন পাবেন। নিম্নে অ্যামাজন কর্তৃপক্ষের  কমিশন চার্টটি দেওয়া হলোঃ

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট কমিশন রেট

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কত প্রকার?

অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রধানত দুই ভাগে করা যায় যথাক্রমে,

  • ফ্রি মার্কেটিং
  • পেইড মার্কেটিং।

ফ্রি মার্কেটিং

ফ্রি মার্কেটিং বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এমন মার্কেটিং পদ্ধতি, যা করতে আমাদের কোন খরচ হয় না। ফ্রি মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা রয়েছে আবার অসুবিধাও রয়েছে। ফ্রি মার্কেটিং একদিকে যেমন সহজলভ্য অপরদিকে তুলনামূলক সময়সাপেক্ষ। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ফ্রিতে করা হয় সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া  ও ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে।

সোশ্যাল মিডিয়া

আপনি যদি সেলিব্রেটি পর্যায়ের একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার হয়ে থাকেন। আপনার কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ ফলোয়ার থেকে থাকে, যদি আপনার এমন কোন অডিয়েন্স থাকে যারা আপনার কথা শুনে বা মানে তাহলে আপনি উক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। 

ধরুন আমার কোন ফেসবুক পেজ রয়েছে এবং সেখানে কয়েক হাজার ফলোয়ার রয়েছে। তাহলে আমি যদি সেখানে কোন প্রোডাক্টের মার্কেটিং করি কেউ না কেউ সেই পেজ থেকে অবশ্যই প্রোডাক্টটি কিনবে। এভাবেই আমি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ফ্রিতে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারি।

ইউটিউব চ্যানেল

আপনার যদি একটি ভালো মানের ইউটিউব চ্যানেল থেকে থাকে, যেখানে আপনি কোয়ালিটি ফুল অথেন্টিক ভিডিও আপলোড দেন। যেখানে প্রতিটি ভিডিওতে কয়েক হাজার ভিউ হয়। তাহলে আপনি এই ইউটিউব চ্যানেলে সহজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য ভিডিওতে আপনার প্রোডাক্ট বিষয়ে অথেনটিক রিভিউ দিতে পারেন এবং ভিডিওর ডেসক্রিপশনে বা ভিডিওর শেষে প্রোডাক্ট এর লিংক দিতে পারেন। আশা করা যায় আপনার ভিডিওতে দেয়া লিংক থেকে ভালো পরিমানে প্রোডাক্ট বিক্রি হবে এবং আপনি ভালো পরিমাণে টাকা আয় করতে পারবেন।

পেইড মার্কেটিং

ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এফিলিয়েট মার্কেটিং করাকে পেইড মার্কেটিং বলে। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ওয়েবসাইট দিয়ে মার্কেটিং করব এটা আবার পেইড হয় কিভাবে। জি, ওয়েবসাইট দিয়ে মার্কেটিং করাই পেইড মার্কেটিং, কেননা  যখন আপনি ওয়েবসাইট দিয়ে মার্কেটিং করতে যাবেন সর্বপ্রথম আপনাকে একটি ওয়েবসাইট  তৈরি করতে হবে। আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন হোস্টিং কিনতে হবে। যে বিষয়ের উপর আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন সেই বিষয়ে SEO  রিলিভেন্ট কন্টেন্ট লিখতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটের SEO করতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি  অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার লাভজনক উপায়

আমার মতে নতুনদের জন্য ফ্রি মার্কেটিং না করাই উত্তম।  কেননা আমি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিত মুখ না হয়ে থাকে বা আমার ইউটিউব চ্যানেলের ভিউয়ার যদি কয়েক হাজার বা কয়েক লক্ষ না হয়ে থাকে তাহলে ফ্রি মার্কেটিং করে আমার তেমন উপকার হবে না।

আবার আমরা যতই বলে থাকি সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউব ফ্রি কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা কোয়ালিটি কন্টেন্ট দেয় বা youtube এ যারা কোয়ালিটি ফুল ভিডিও দেয় এই ভিডিও তৈরির পেছনে কিন্তু পুরো একটা টিম থাকে, যার মাঝে কেউ স্ক্রিপ্ট লেখে, কেউ ভিডিও এডিটিং করে,কেউ থাম্বনেইল ডিজাইন করে সহজেই বোঝা যাচ্ছে কোয়ালিটি কনটেন্ট তৈরির জন্য অবশ্যই ব্যয় করতে হয়। 

অপরদিকে কেউ যদি ওয়েবসাইট তৈরি করে, ভালোমতো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করে এবং নিয়মিত প্রোডাক্টের জন্য কোয়ালিটিফুল কন্টেন্ট লেখে, আশা করা যায় তার ওয়েবসাইটটি খুব দ্রুত রাঙ্ক করবে। একবার যদি তার ওয়েবসাইটটি রাঙ্ক করে ও  ওয়েবসাইটে ভিজিটর আসা শুরু করে, তাহলে আশা করা যায় খুব দ্রুতই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে তার ইনকাম জেনারেট হওয়া শুরু হবে।

তাই আমার মতে নতুনদের ফ্রি মার্কেটিং এর দিকে না ঝুকে পেইড মার্কেটিং এর  চেষ্টা করা উচিত।

শেষ কথাঃ

অনলাইন থেকে ইনকাম করার অন্যতম সহজ উপায় অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আমরা কিছু কার্যকরী ও সহজ দিক নির্দেশনা মেনে চললে অতি দ্রুত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করতে পারবো। আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বা  শিখতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনি আমাদের এই কোর্সটি Digital Marketing করতে পারেন।  

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে হালালভাবে ইনকাম করতে চান তাহলে হালালভাবে ফ্রিল্যান্সিং বইটি হতে পারে একটি সেরা বই। এই বইটি ইনশাআল্লাহ আপনাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতিটি ধাপে হালাল ভাবে ইনকাম করার পথ দেখাবে

তাহলে দেরী কেন? এখনই বইটি ডাউনলোড করে নিন

এই ওয়েবসাইটের সকল কন্টেন্ট (ছবি, লেখা ইত্যাদি) অন্য কোথাও কপি করে বা পরিবর্তন করে পাবলিশ করার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যদি কেউ এমন অপরাধমূলক কাজ করেন তাহলে DMCA পাঠানো সহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।



Leave a Reply

Index